দেশকণ্ঠ অনলাইন : রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বোলিং নৈপুন্যে চেন্নাই টেস্টে ভারতের কাছে ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারলো সফরকারী বাংলাদেশ। রান বিবেচনায় ভারতের কাছে এটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার টাইগারদের। ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ৫১৫ রানের টার্গেটে ২৩৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৪০ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৮৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে হারের স্বাদ দেন অশি^ন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ১১৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন অশি^ন। ম্যাচ সেরা হন অশ্বিন।
চেন্নাইয়ে ৫১৫ রানের টার্গেটে তৃতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ১৫৮ রান করেছিলো বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে আরো ৩৫৭ রান করতে হতো বাংলাদেশকে। শান্ত ৫১ ও সাকিব ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে প্রথম ঘন্টায় কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার বলে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে জীবন পান সাকিব। স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন ভারতের উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্ত। ১৭ রানে জীবন পেয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিব। অশ্বিনের বলে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে যশ্বসী জয়সোয়ালকে ক্যাচ দেন ৩টি চারে ২৫ রান করা সাকিব। সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে এসে ১ রানে বিদায় নেন লিটন দাস। জাদেজার বলে স্লিপে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দেন লিটন। লিটনের মত দ্রুত সাজঘরে ফিরেন পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় মেহেদি হাসান মিরাজ। অশ্বিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং-অনে জাদেজাকে ক্যাচ দেন মিরাজ। ব্যক্তিগত ৮ রানে মিরাজকে শিকার করে ১০১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে ৩৭তম ৫ উইকেট পূর্ণ করেন অশ্বিন। মিরাজ ফেরার পরের ওভারেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন এক প্রান্ত আগলে রাখা শান্ত। জাদেজার বলে জসপ্রিত বুমরাহকে ক্যাচ দেন তিনি। ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১২৭ বলে ৮২ রান করেন শান্ত।
দলীয় ২২২ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে শান্ত ফেরার পর শেষ উইকেটে মাত্র ১২ রান যোগ করে মধ্যাহ্ন-বিরতির আগেই ২৩৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদকে ৫ রানে অশ্বিন ও শেষ ব্যাটার হাসান মাহমুদকে ৭ রানে বোল্ড করেন জাদেজা। অশ্বিন ৮৮ রানে ৬ উইকেট নেন। এছাড়া জাদেজা ৫৮ রানে ৩টি ও বুমরাহ ১টি উইকেট নেন। দুই ইনিংসে ভারত যথাক্রমে ৩৭৬ ও ৪ উইকেটে ২৮৭ রান করে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিলো ১৪৯ রান।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে নয়া ইতিহাস গড়ল ভারত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্টটি ছিল ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫৮০তম ম্যাচ। এর আগে পর্যন্ত ১৭৮টি ম্যাচে জয় পেয়েছিল ভারত। হেরেছিল সমান সংখ্যক ম্যাচে, অর্থাৎ ১৭৮টি টেস্টে। ড্র করেছিল ২২২টি ম্যাচে। বাংলাদেশকে হারানোর ফলে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের মোট জয়ের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৯। অর্থাৎ এই প্রথমবার জয়ের সংখ্যা নিজেদের হারের সংখ্যাকে ছাপিয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি ম্যাচ টাই হয়। ১৯৩২ সালে শুরু হয়েছিল ভারতের টেস্ট অভিযান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই টেস্টে অবশ্য হারতে হয়েছিল ভারতকে। ভারতের প্রথম টেস্ট জয় আসে অবশ্য ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই। সেটা স্বাধীনতার পর ১৯৫১-৫২। ঘটনাচক্রে সেটাও ঘটেছিল এই চেন্নাইয়ের মাটিতেই। আর তার ৭০ বছরের বেশি সময়ের পর নিজেদের হারের সংখ্যাকে টপকে গেল ভারত। সেই সঙ্গে যদি প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা যায়, তাহলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয় পেয়েছে ভারত। ১৩৬টি টেস্টের মধ্যে টিম ইন্ডিয়া জিতেছে ৩৫টি টেস্ট। তার পরই আছে অস্ট্রেলিয়া। ১০৭টি টেস্টে ভারতের ম্যাচ জয়ের সংখ্যা ৩২। যদিও দুটি দলের কাছেই জয়ের থেকে বেশি ম্যাচ হেরেছে ভারত। একমাত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই এখনও পর্যন্ত কোনও টেস্ট ম্যাচ হারেনি ভারত। ১৪টি ম্যাচ খেলেছে মেন ইন ব্লু। তার মধ্যে চেন্নাই টেস্ট ধরেছে জিতেছে ১২টি টেস্ট। ড্র হয়েছে ২টি টেস্টে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২৭ তারিখ থেকে। কানপুরে ফের জয় পেতে নামবেন রোহিতরা। এই সিরিজের পরই থাকবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ। সেখানে যে জয়ের সংখ্যাটা আরও বাড়বে, সেকথা বলাই বাহুল্য।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : প্রথম ইনিংস ৩৭৬/১০, দ্বিতীয় ইনিংস ২৮৭/৪ ডি, ৬৪ ওভার (গিল ১১৯*, পান্ত ১০৯, মিরাজ ২/১০৩)।
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ১৪৯/১০ এবং দ্বিতীয় ইনিংস ২৩৪/১০ (শান্ত ৮২, সাদমান ৩৫, অশ্বিন ৬/৮৮)।
ফল : ভারত ২৮০ রানে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।
ম্যাচ সেরা : রবীচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)।
দেশকণ্ঠ/আসো