• মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ১১:৪৮    ঢাকা সময়: ২১:৪৮

ঢাকে কাঠি ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু

দেশকন্ঠ  অনলাইন : গ্রীষ্মের অভিঘাত ও বর্ষার দুঃস্বপ্নের পর উমা এলেন জগতকে নির্মল আনন্দে ভরিয়ে দিতে এবং সুর ও অসুরের মঞ্চ থেকে অসুরকে সংহার করতে। মহালয়ার পর থেকে ক্ষণগণনার পর ইতিমধ্যে ঢাকে কাঠি পড়েছে, ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হলো সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আনন্দ, আয়োজন, উদযাপনে সর্বজনীন এই উৎসবে মাততে প্রস্তুত দেশ।

বুধবার বোধনের পর দেবীর অধিবাস। বেল তলায় দেবীর আরাধনা। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সপরিবারে একরাত সেখানেই থাকবেন মা দুর্গা। সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে।

এ বছর দুর্গার আগমন ও গমন

এই বছর দুর্গার আগমন দোলা বা পালকিতে। আর মা দুর্গা পুত্র-কন্যা নিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন গজ বা হাতির পিঠে আসীন হয়ে।

শাস্ত্রমতে, দুর্গা যদি পালকিতে করে আসেন, তাহলে ফল ‘দোলায়াং মকরং ভবেৎ’ অর্থাৎ মহামারী, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যু। যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য। দেবী ফিরবেন গজ বা হাতিতে, শাস্ত্র মতে যা দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন। দেবীর আগমন বা গমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। পরিশ্রমের সুফল পায় মর্তলোকের অধিবাসীগণ। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি নয়, ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা বর্ষণ।

বোধন

পুরাণ মতে, সূর্যের উত্তরায়ণ হচ্ছে দেবতাদের দিন। সূর্যের এই গমনে সময় লাগে ছয় মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। আর দিনের বেলায় দেবতারা জেগে থাকেন। তাই শাস্ত্র মতে দিনেই দেবতাদের পূজা করা হয়।

আবার সূর্যের দক্ষিণায়ন হলো দেবতাদের রাত। সূর্যের এই গমনকালে ছয় মাসকে দেবতাদের এক রাত ধরা হয়।  আর রাতে দেবতারা পূজার জন্য ‘অকাল’। কিন্তু দেবীর পূজা করতে হলে তো তার বোধন অর্থাৎ জাগরিত করতে হবে।  

তবে রামচন্দ্রের আগে প্রথম আদ্যাশক্তি মহামায়ার পূজা করেছিলেন রাজর্ষি শুঁঠ। আর তার সঙ্গী ছিলেন সমাধি বৈশ্য। সেই পূজাকে আমরা বর্তমানে বাসন্তী পূজা নামে জানি।

অকাল বোধন

মহাদেবের বর পেয়েছিলেন রাবণ। আর দেবী দুর্গা বিভিন্ন রূপের একনিষ্ঠ সাধকও ছিলেন মহাদেবে। কিন্তু রামের হাতে রাবণের বধ ছিল দৈববাণী। তাই রাম-রাবণের যুদ্ধ যখন অবশ্যম্ভাবী, সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার দ্বারস্থ হলেন দেবতারা।

কিন্তু দেবী তখন নিদ্রিতা। দেবতাদের অনুরোধে স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীর পূজা করে তাকে তুষ্ট করার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। দেবী বললেন, যদি রামচন্দ্র তার বোধন করেন, তবেই তিনি রাবণ বধে তাকে সাহায্য করবেন। রামচন্দ্র লঙ্কা অভিযানের আগে তাই করেছিলেন। সেজন্যই বিশেষ করে শরৎকালের এই দুর্গা পূজা অকাল বোধন নামেও পরিচিত।

বেল গাছের নিচে কেন একদিন থাকবেন দুর্গা

রামকে দেবীর নির্দেশের কথা জানিয়ে দেন প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবরাজ ইন্দ্র। যেহেতু সময়টা ছিল শরৎকাল, তাই রামচন্দ্র নিজ হাতে দেবীর মূর্তি গড়ে তার আরাধনার প্রস্তুতি নিলেন। সেই সময় ধ্যানে বসে  ব্রহ্মা দেখলেন বেল গাছের নিচে একটি ৮-১০ বছরের বালিকা খেলা করছে। ব্রহ্মা বুঝলেন তিনিই দেবী।

তারপরেই প্রজাপতি স্থির করলেন দেবীর বোধনের পুজো হবে ওই বেল গাছের নিচেই। সেই কারণে প্রথা মেনে আজও বোধনের আগে বেল গাছের পূজা করে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয় দেবীর ঘটে। তারপরেই শুরু হয় বোধন, শুরু হয় দেবীর আরাধনা।

ইতিমধ্যে ষষ্ঠীর সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ঠাকুর দেখা, নতুন জামা, নতুন জুতো পড়ে হৈ-হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া। বাড়ির পুজোগুলোর সাবেকিয়ানা, বারোয়ারীর নান্দনিকতায় মিলে-মিশে রঙিন উদযাপন শুরু হয়েছে দেশের পাড়ায় পাড়ায়। তবে এখন চলছে একেবারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিশেষ করে বারোয়ারী মণ্ডপগুলোতে দম ফেলার সময় নেই প্রতিমার কারিগরসহ সাজসজ্জার কাজ করা মানুষগুলোর।

দুর্গোৎসব মূলত পাঁচ দিনের হলেও এর শেষ হয় কোজাগরি লক্ষ্মীপূজায় গিয়ে। টানা এই লম্বা সময় নানা আনন্দ, উপাচারে মেতে থাকেন সনাতনীরা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য বলছে, গতবারের তুলনায় ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা বাড়লেও, সারাদেশে এই সংখ্যা কমেছে। দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হবে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি ।

দুর্গার আগমনে জীবনের সব হতশ্রী দূর হোক। আর দুর্গোৎসবের স্মৃতিগুলো ঝরে পড়ুক শিউলি আর ছাতিম হয়ে।
দেশকন্ঠ//

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।