দেশকণ্ঠ অনলাইন : জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্ব নিয়ে খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দ্রুত কাউকে নায়ক কিংবা ভিলেন না বানানোর আহবানও জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড়ের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেটা ধরে রাখতে পারেন না। সফল ক্রিকেটাররা যেমন প্রশংসায় ভাসেন, তেমনি ব্যর্থদের নিয়ে চলে সমালোচনা। বাংলাদেশের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের মতে দ্রুত কাউকে বিচার করা ঠিক না। সালাহউদ্দিনের বিসিবিতে সহকারী কোচের দায়িত্বের কেবল এক সপ্তাহ হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইনডোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট দলের সম্ভাব্য ক্রিকেটারদের নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করছেন। রবিবার তিনি মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক সৌরভ এবং তাইজুল ইসলামদের সাথে আলাদা আলাদা কাজ করেছেন। অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আপনারা কাউকে দ্রুত নায়ক বানাবেন না। আবার দ্রুত কাউকে ভিলেনও বানাবেন না। প্রতিটি খেলোয়াড় অনেক পরিশ্রম ও সংগ্রামের পর দলে জায়গা করে নেয়’।
আন্তর্জাতিক স্থরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেকেরই একটু সময় লাগে। আবার কেউ কেউ শুরুতেই সাফল্য পেয়ে যায়। তখন গণমাধ্যম তাদের দ্রুত নায়ক বানিয়ে ফেলে। কিন্তু সবার সময় এবং পরিস্থিতি একরকম নয়। বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটাররা প্রতিপক্ষের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারছেন না। সালাহউদ্দিনও এই সমস্যার সুনির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে পাননি। বাংলাদেশের সিনিয়র সহকারী কোচ বলেন, ‘আমার কাছে তাদের ব্যর্থতার কারণটা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। আমার কাছে তারা সবাই খুব মেধাবী। আমি তাদের সাথে এখনও সরাসরি কাজ শুরু করিনি, তবে যতটুকু দেখেছি, আমার মনে হয়েছে সমস্যা খুঁজে বের করার চেয়ে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচিং সেটাপে সালাহউদ্দিন যুক্ত হয়েছেন ১৪ বছর পর। লম্বা সময় পর বিসিবিতে ফিরে আসার অনুভূতি কেমন? সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমার আসলে কোনো বিশেষ অনুভূতি নেই। এটা আমার পেশা। আমি যে জার্সিতেই থাকি না কেন, ১১০ ভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। পেশাদার কোচ হিসেবে সর্বোচ্চটা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যতদিন কাজ করি, চেষ্টার ত্রুটি রাখব না।’ আগের দফায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছেন। নতুন করে বাংলাদেশের সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই কোচ। সালাউদ্দিন দেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তার আগে জাতীয় দলের অনুশীলন কিট গায়ে চাপানোর অনূভুতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার আসলে অনুভূতি খুব কম। অনুভূতি হয় না। কারণ এটা আমার পেশা। আমি যেই জার্সিতেই থাকি, সেটাতে পুরোটা দেওয়াই হচ্ছে আমার কাজ’।
ক্রিকেটভক্তদের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন সালাউদ্দিন, ‘আমি যেহেতু পেশাদার কোচ, আমি যেখানে কাজ করবো, সেখানেই আমার পুরোটা দিতে হবে। অনূভূতি তো অবশ্যই থাকবে। হয়তো বাসায় রোমাঞ্চটা একটু বেশি। চেষ্টা করবো যেন মানুষ আমাকে যেভাবে ভালোবাসছে; আমি দেখলাম শেষ কিছুদিনে, সেটার প্রতিদান দেওয়াও নৈতিক দায়িত্ব হয়ে গেছে।’ সিনিয়র সহকারী কোচ হওয়ায় বাংলাদেশ দলে দায়িত্বটা কেমন হবে জানালেন তিনি, ‘যেহেতু আমি সহকারী কোচ, আমার মনে হয় যেহেতু হেড কোচ আছে এখানে, তার দর্শনটা আসলে আমাকে...সে কীভাবে দল চালাচ্ছে, তাকে সাহায্য করা। এর সঙ্গে খেলোয়াড়দের সাহায্য করা, যতুটুকু পারি। আমার ভূমিকাটা হয়তো ভিন্ন হবে আগেরবারের তুলনায়।’ ‘চেষ্টা করবো আমাদের ছেলেরা যেন আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হয়। সেই সঙ্গে আমাদের যে বিদেশি কোচরা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা যেন আরেকটু ভালো হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবো’, আরও যোগ করেন সালাউদ্দিন।
নিজের দায়িত্বটা নিয়েই কথা বললেন সবার আগে, ‘যেহেতু সহকারী কোচ, আর হেড কোচ আছে এখানে। সে কিভাবে দলটা চালাচ্ছে তাকে হেল্প করা সেই সাথে ক্রিকেটারদের যতটুকু পারি হেল্প করা। আমার রোলটা হয়তো একটু আলাদা হবে আগেরবারের তুলনায়। চেষ্টা করব ছেলেরা যেন আরো উন্নতি করে, বিদেশী কোচ আছে তাদের সঙ্গে ছেলেদের যোগাযোগটা যাতে আরো ভালো হয় সেদিকে লক্ষ্য থাকবে।’ নতুন যে সব খেলোয়াড় আছে তাদের নিয়ে বেশ আশাবাদী সালাউদ্দিন। তবে তাদের গাইডলাইন দরকার, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি, ‘যখন সাকিব তামিম মুশফিকরা এসেছিল তখনও তারা টপ খেলোয়াড় হয়নি। তারা আসলে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে তাদের ইচ্ছা এবং নিজের মোটিভেশন এর কারণে একটা পর্যায়ে আসছে। এই ছেলেদের যে ওই মোটিভেশনটা নাই সেটা বলা যাবে না। এই খেলোয়াড়দের অনেক ইচ্ছা হয়তো আছে।’
সদ্য সহকারী কোচের দায়িত্ব নেয়া সালাউদ্দিনের ভাষ্য, ‘এই ছেলেদের সঠিক গাইডলাইন করলে তারা হয়তো একদিন স্টার খেলোয়াড়ে আবির্ভূত হবে। চেষ্টা তো করতেই হবে তাছাড়া সবাইকে একটু আশাবাদী হতে হবে, ছেলেদের সাপোর্ট করার জন্য।’ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ে ভালো করছে না টিম টাইগার্স। সমস্যা কোথায় পরে সালাউদ্দিন বললেন, ’আসলে সরাসরি তো বলা যাবে না সেটা টেকনিক্যালি সমস্যা নাকি মানসিক সমস্যা নাকি অনুশীলনের সমস্যা। সেটা সামনাসামনি কাজ না করলে বোঝা যাবে না। এটার জন্য তো আমাদের অনেক কোচিং স্টাফ আছে তারা তো ভালো জানে খেলোয়াড়রা ভালো জানে। আমার মনে হয় সমস্যাটা খোঁজা হচ্ছে।’ অবশ্য এখনই সব পরিবর্তন হবে না সেটাও জানেন সালাউদ্দিন, ‘রাতারাতি সবকিছু যে পরিবর্তন হয়ে যাবে সেটা আশা করা ঠিক না। এট লিস্ট মানসিকভাবে তারা একটু ভালো হতে পারে আরেকটু চিন্তাভাবনাটা বড় করতে পারে। সেই সামর্থ্যটুকু যাতে পুরোটা দিতে পারে সেটার দিকে আসলে লক্ষ্য রাখা উচিত’।
দেশকণ্ঠ/আসো