• মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৮:৫৫    ঢাকা সময়: ১৮:৫৫

মরিচের ঝাল কি সত্যি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দেশকন্ঠ  অনলাইন : খাবারের অন্যতম একটি উপাদান মরিচ। তবে মরিচ খাওয়ার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে। মরিচের ঝাল বা অত্যধিক পরিমাণ ক্যাপসাইসিনের উপস্থিতি থাকায় ইউরোপের কিছু দেশে মশলাদার রামেন নুডলস নিষিদ্ধ করার ঘটনাও দেখা গেছে। আসলেই কি মরিচ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ? বিবিসির প্রতিবেদন উঠে এসেছে এ বিষয়টি। মশলাদার খাবার নিয়ে উদ্বেগের কারণ হলো ক্যাপসাইসিন। এটি মরিচের একটি সক্রিয় উপাদান, যা খাবারে ঝাল স্বাদ দিয়ে থাকে। কিন্তু খুব বেশি ক্যাপসাইসিন খাওয়ার ফলে সত্যিই কী বিষক্রিয়া হতে পারে? বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি।

ক্যাপসাইসিন কী: ক্যাপসাইসিন মরিচে থাকা একটি মিশ্র পদার্থ যা গরম বা ঝালের অনুভূতি দেয়। ফলে আমরা যখন মরিচ খাই তখন আমাদের ঝাল বা জ্বলন্ত স্বাদ লাগে। এটি কাপসাইসিন ক্যাপসাইসিনয়েড নামক যৌগের একটি অংশ।  যদিও মরিচের মধ্যে প্রায় ২৩টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপসাইসিনয়েড পাওয়া গেছে, এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো ক্যাপসাইসিন। যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি খাদ্য উৎপাদকদের খাবারে খাঁটি ক্যাপসাইসিন যুক্ত করতে অনুমতি দেয় না। কেননা, দেশটির খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাঁটি ক্যাপসাইসিনকে অনিরাপদ বলে মনে করে। কিন্তু মরিচের নির্যাসে প্রাকৃতিকভাবে ক্যাপসাইসিন উপস্থিত থাকলে সেটি কতখানি ব্যবহার করা যাবে তা নির্ধারিত করে দেয়নি দেশটির খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

অতিরিক্ত ক্যাপসাইসিন খেলে যেসভ উপসর্গ দেখা দেয়: উচ্চ মাত্রায় ক্যাপসাইসিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ককারী দেশ হিসেবে ডেনমার্কই প্রথম দেশ নয়। এর আগে ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ইন জার্মানি (বিএফআর) মাত্রাতিরিক্ত ক্যাপসাইসিন খাওয়ার ব‍্যাপারে সতর্ক করেছে। অতিরিক্ত ক্যাপসাইসিন খেলে শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।  

টিআরপিভি নামক একটি পেইন রিসেপ্টর সক্রিয় থাকায় ক্যাপসাইসিনয়েড বেদনাদায়ক অনুভূতি ও তীব্র জ্বালাপোড়া তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিনয়েড বেশি পরিমাণ খাওয়ার ফলে বুকজ্বালা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং পেটে ও বুকে ব্যথা হতে পারে। ঠান্ডা ঘাম, ব্লাড প্রেশার ওঠানামা করতে পারে।  তীব্র মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে ক্যাপসাইনয়েড। তবে এটি কী পরিমাণ ব্যবহার করলে এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।

গবেষণা যা বলছে: ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ইন জার্মানির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্যাপসাইসিনয়েডের ডোজ কার জন্য কতখানি গ্রহণে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য না থাকায় স্বাস্থ্য বিধিনিষেধসহ ভোক্তাদের জন্য কোনও সুপারিশ করা যায় না। তবে মানুষের উপর চালানো গবেষণার তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিএফআর বলছে, এটি অনুমান করা যেতে পারে যে শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে এক মিলিগ্রাম বা তার বেশি ক্যাপসাইসিনয়েড গ্রহণের ফলে হালকা অস্বস্তিকর প্রভাব হতে পারে, যেমন জ্বরের অনুভূতি, পেট বা বুক জ্বালা।

এটি ১৭০ মিলিগ্রাম পরিমাণ খেলে মানুষের শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। প্রায় ৬০০ মিলিগ্রাম ক্যাপসাইসিনয়েড খাওয়ার পর রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একটি ঘটনাও বিফআর নথিভুক্ত করেছে।  জার্মানির বার্লিনে মরিচ খাওয়ার এক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ২৭ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি চারটি ভুট জোলোকিয়া বা নাগা মরিচ এবং অন্যান্য মশলাদার খাবার খেয়েছিলেন।

ভুট জোলোকিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচের জাত হিসেবে বিবেচিত। ওই মরিচ খাওয়ার আড়াই ঘণ্টা পরে সেই ব্যক্তি পেটে ব্যথাসহ প্রচণ্ড পেট ফোলা অনুভব করতে শুরু করেন। পরে সন্ধ্যার বার্লিনের হেলিওস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। রিপোর্টে ডাক্তাররা অন্য কোনও সমস্যা খুঁজে পান নি, ফলে শুধু ব্যথার কারণে কিছু ব্যথানাশক ওষুধ দিয়েছিলেন। মরিচ খাওয়ার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর লোকটি বমি করলে আস্তে আস্তে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। তবে এ ধরনের উপসর্গ যে শুধু ক্যাপসাইসিন খাওয়ার ফলেই হতে পারে তা কিন্তু নয়।

অস্ট্রেলিয়ার বন্ড ইউনিভার্সিটির ওষুধ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান মোরো বলেছেন, ক্যাপসাইসিন খুব অল্প সময়ের জন্য জ্বালাপোড়া তৈরি, অস্বস্তি ও ব্যথার কারণ হতে পারে।যদি এটি কারও চোখে পড়ে, তখন সত্যিই তীব্র জ্বালাপোড়া হতে পারে এবং দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দিতে পারে। আবার শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে দীর্ঘক্ষণ কাশি হতে পারে। এটি হাঁপানির মতো অসুস্থতাকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ক্যাপসাইসিন খাওয়ার ফলে যে লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে তা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ক্যাপসাইসিন আমাদের স্নায়ুকে সক্রিয় করে এবং সাময়িক জ্বালাপোড়া তৈরি করতে পারে, এটি কেবল একটি সংবেদন তৈরি করে, এটি আমাদের তেমন কোন ক্ষতি করে না।

কোন উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে:  ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ইন জার্মানি (বিএফআর) বলছে, অতিমাত্রায় ক্যাপসাইসিন শিশুদের জন্য তীব্র বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তবে কী পরিমাণ খাওয়ার ফলে এটি হতে পারে সেটি নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে এটি অনুমান করে বলা যায় যে মানুষের মধ্যে ক্যাপসাইসিনের প্রাণঘাতী ডোজ প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন‍্য ৫০০ থেকে ৫০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

যদি কোনও ব‍্যক্তির ওজন ৭০ কেজি হয় তার জন্য মাত্রা হতে পারে ৩৫ হাজার মিলিগ্রাম। একটি ১০০ গ্রাম ওজনের হালাপেনো মরিচে প্রায় ১৫ মিলিগ্রাম ক্যাপসাইসিন থাকে। একই পরিমাণ স্কচ বনেট মরিচে থাকে প্রায় ২৬০ মিলিগ্রাম। আর ভুট জোলোকিয়ার প্রতি ১০০ গ্রাম তাজা মরিচে থাকে প্রায় ৪০০০ মিলিগ্রাম।

তবে অধ্যাপক মোরো বলছেন, ক্যাপসাইসিনের অতিরিক্ত মাত্রার সুনির্দিষ্ট সীমা বেধে দেয়া নেই। ক্যাপসাইসিনের দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে ১০ বছরের একটি পর্যালোচনায়। ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিন ইঁদুরের পাকস্থলী ও লিভারে ক্যান্সারের লক্ষণ তৈরি করেছে। আর মানব শরীরে গ্যাস্ট্রিক "মাইক্রোব্লিডিং" সৃষ্টি করতে দেখা গেছে।

আবার অন্য কোনও কোনও অধ্যয়নে এসব উপসর্গের কোনটিই দেখায়নি। তবে ২০২২ সালের একটি সামগ্রিক পর্যালোচনার বিশ্লেষণ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে মশলাদার খাবার ও কাঁচা মরিচ স্বাস্থ্যের উপর ভাল বা খারাপ কোনও প্রভাবই ফেলে না। এসব পর্যালোচনায় যে প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে তা খুব বেশি মান সম্পন্নও নয়।

নিউ মেক্সিকোতে উদ্ভিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক পল বোসল্যান্ড বলেছেন, আমাকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে 'সুপারহট মরিচ খাইয়ে কি তোমাকে মেরে ফেলব?। এর হ্যাঁ বা না কোনও উত্তরই নেই। বলেছেন স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং মরিচ গবেষণায় বিশ্বের অন্যতম এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, মরিচ সত্যিই মৃত্যুর কারণ হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের দেহ সেই পর্যায়ে পৌঁছানোর অনেক আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যভাবে বললে, প্রাণঘাতী মাত্রায় পৌঁছানোর আগেই আমাদের শরীর ক্যাপসাইসিনযুক্ত খাবারকে বের করে দেবে। অনেকের খুব ঝাল মরিচ খেয়ে ঘাম, কাঁপুনি, বমি কিংবা প্রাণ যাওয়ার মতো অনুভূতিও তৈরি হতে পারে।
দেশকন্ঠ/এআর

 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।