দেশকণ্ঠ ডেস্ক : স্ক্যামারদের দৌরাত্ম্যে নিউইয়র্কবাসীর পেরেশানির শেষ নেই। এদের অত্যাচারে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। এত দিন স্ক্যামারদের পাল্লায় পড়ে সীমিত পরিসরে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দিনে দিনে তা বাড়ছে। এ কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে প্রেশার। পারিবারিক অশান্তিও বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে আর্থিক অনিশ্চয়তা। হারাম হয়ে যাচ্ছে ঘুম। সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন, এই বুঝি হ্যাক হয়ে গেল সব। প্রতিদিন বারবার ব্যাংক হিসাবের অর্থ চেক করছেন। দেখেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগের হিসাবগুলোও। যখন দেখেন অর্থ আছে, তখন স্বস্তি আসে। অর্থ না থাকলেই চমকে ওঠেন। শুরু হয় সীমাহীন দুর্ভোগের। কারণ বিভিন্ন হিসাবে থাকা অর্থ নিতে একের পর এক চেষ্টা করে যাচ্ছে হ্যাকাররা। এতে তারা কখনো সফল, আবার কখনো ব্যর্থ। ফোন, ইমেইল হ্যাক করে একের পর এক নতুন ইমেইল খুলতে থাকে। ফোন করতে থাকে একাধিক ব্যাংক ও শেয়ার হাউসে। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়ে ঋণী করে দিচ্ছে মানুষকে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ব্যাংকে গিয়ে সময় লাগলেও প্রতিকার মেলে কিন্তু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের হিসাবের ক্ষেত্রে অর্থ ফেরত মিলছে না। উল্টো বলা হচ্ছে, তারা অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক কিছু দেখতে পাচ্ছে না। আবার শেয়ারবাজারের বিষয়ে বলা হলে তখন বলা হয় এটি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে রিপোর্ট দেওয়ার পর তা নিয়ে পুলিশে রিপোর্ট করার জন্য। কিন্তু ওই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে স্বীকারই করা হয় না যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। এ অবস্থায় এখন ব্যাংক, সোশ্যাল সিকিউরিটি, আইআরএস, গুগলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলা হচ্ছে, নিজ নিজ তথ্য গোপন ও নিরাপদ রাখতে কী কী করতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষ কীভাবে জানতে পারবে, তার তথ্য হ্যাক হতে পারে।
সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে বলা হচ্ছে, ভয় দেখিয়ে ও জেলে যাওয়ার কথা বলে তথ্য নিতে পারে হ্যাকাররা। এ ধরনের বার্তা পেয়ে মানুষ ভীত ও আতঙ্কিত হচ্ছেন। তবে কৌশল জানার কারণে সতর্ক হচ্ছেন ও সাবধান থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন। কেবল স্যোশাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টই নয়, বিভিন্ন ব্যাংক থেকেও সতর্কতামূলক বার্তা আসছে। এতে বলা হচ্ছে, আপনার অ্যাকাউন্ট সাসপেসিয়াস অ্যাক্টিভিটি দেখা যাচ্ছে। এমন হলেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার কথা বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এটাও বলা হচ্ছে, আপনি সতর্ক থাকুন। আপনার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখুন। আর তা রাখতে টু ফ্যাক্টর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। একটি ব্যাংক থেকে এ ধরনের চিঠি পেয়েছেন এমন একজন বলেন, আমাকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে এবং ব্যাংক হিসাবের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কী কী করতে হবে, তা-ও বলেছে। টু ফ্যাক্টর সিকিউরিটির কথাও বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার পর ব্যাংকের কাছে অভিযোগ দিতে হচ্ছে। অভিযোগ দেওয়ার পর অনুসন্ধান হচ্ছে ঘটনার। অনুসন্ধান শেষে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যাংক অর্থ ফেরত দিচ্ছে। ব্যাংকের পক্ষে এ ধরনের ঘটনার অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। কারণ তাদের অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মকর্তাদের ক্ষমতা অনেক। তারা বিভিন্ন অথরিটির কাছ থেকে তথ্য নিতে পারে। ফলে তারা স্ক্যামারের সঠিক লোকেশন বের করতে পারে। পরিচয়ও শনাক্ত করতে পারে। কারণ তারা অনলাইনের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকে। একজন ভুক্তভোগী জানান, তার বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব থেকে হ্যাকারার অর্থ নিয়ে নেয়। দুই মাস পর তিনি দুটি হিসাবের অর্থ পেয়েছেন। চার মাস পরে পেয়েছেন বাকি হিসাবগুলোর অর্থ। তিনি বলেন, এটি অনেক কঠিন সময়, যন্ত্রণাদায়ক সময়।
এদিকে সোশ্যাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের কাছে স্ক্যামের অভিযোগ নিয়ে অনেক মানুষ যাচ্ছে। কিন্তু তাদের পক্ষে সেভাবে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা সঙ্গে সঙ্গে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। বরং অভিযোগকারীকে আরো সতর্ক ও অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সম্প্রতি স্ক্যামের শিকার হওয়া এক ব্যক্তি সোশ্যাল সিকিউরিটির সহায়তা চান। তিনি ঠিকানাকে বলেন, আমার ব্যাংক থেকে স্ক্যামাররা অর্থ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু নিতে পারেনি। তবে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্থ নিয়ে গেছে, পরে তা ফেরত পাওয়া গেছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে গেছে ট্রান্সফার করে। কিন্তু এ ঘটনার পর ওই কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আমার অ্যাকাউন্টে কোনো ধরনের সাসপেসিয়াস অ্যাক্টিভিটি দেখতে পায়নি। তাই তারা কিছু করতে পারেনি। অথচ এখান থেকে অনেক অর্থ স্থানান্তর করে নেওয়া হয়েছে। সেই অর্থের একটি অংশ ফেরত পাওয়া গেলেও বাকি অর্থ হাওয়া হয়ে গেছে। ওই কোম্পানি আমার হ্যাক হওয়া অর্থের কোনো দায়িত্ব নিতে চাইছে না।
ওই ভুক্তভোগী আরো বলেন, আমার মোবাইল ফোন ও ইমেইল হ্যাক হওয়ার পর আমি সোশ্যাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের অফিসে যাই। তাদেরকে বিষয়টি বলি। কিন্তু আমাকে বলা হয়, এ ব্যাপারে তাদের করণীয় কিছু নেই। তারা সব অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। সাধারণত দেখা যায়, চারটি বেসিক সাইন ব্যবহার করে স্ক্যামাররা স্ক্যাম করে। তারা সাধারণত অতিপরিচিত সংস্থা ও এজেন্সির নাম ব্যবহার করে। যেমন সোশ্যাল সিকিউরিটির নাম ব্যবহার করে। সেখানে তারা ইমেইল করতে পারে, সেই ইমেইলে অ্যাটাচমেন্ট দিতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে সোশ্যাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের অফিশিয়াল লোগোর মতো দেখতে লোগো, সিল, সিগনচোর। পিকচার অব দ্য এমপ্লয়ি ক্রেডিনশিয়ালও থাকতে পারে। স্ক্যামাররা যেকোনো সমস্যার কথা কিংবা কোনো পুরস্কারের কথাও উল্লেখ করতে পারে । তারা ফোনও করতে পারে। স্ক্যামাররা প্রেশার তৈরি করতে পারে। সেটি করে দ্রুত কাজ করার জন্য বলতে পারে। তারা থ্রেট দিতে পারে যে তোমাকে অ্যারেস্ট করা হবে কিংবা তোমার বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেওয়া হতে পারে। স্ক্যামাররা উপহার কার্ড, প্রিপেইড ডেবিট কার্ড, ক্রিপ্টোকারেন্সি, ওয়্যার বা মানি ট্রান্সফার বা নগদ মেইল করে অর্থ প্রদান করতে বলে। তারা অর্থ একটি ‘নিরাপদ’ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতেও বলতে পারে।
এদিকে আইআরএসের নামেও স্ক্যাম করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের কাছে তথ্য রয়েছে, সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, ব্যক্তিগত নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে দেখা যাচ্ছে তার ফাইল অন্য কেউ সাবমিট করে দিয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যখন ফাইল করতে যাচ্ছেন, তখন আর ফাইল করতে পারছেন না। তার অনলাইনে ফাইল করার কোনো উপায় থাকে না। তখন প্রকৃত ব্যক্তিকে মেইল করে ফাইল করতে হচ্ছে এবং ব্যাখ্যা দিতে হয় যে তিনি ফাইল করেননি। তাই বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে আসছেন, সব নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর দেরি না করে ফাইল করে ফেলতে, যাতে সোশ্যাল সিকিউরিটির অধীনে একজনের ফাইল অন্যজন জমা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে।
দেশকণ্ঠ/আসো