দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : খাবারসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় একের পর এক বন্ধ হচ্ছে মুরগির খামার। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকগণ। এ জন্য তাঁরা মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। খামার বন্ধ হওয়ায় এবার রমজানে ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ হবে না। শুধু তাই নয়, দুধ ও মাছেরও ঘাটতি থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ধ রাখা হয়েছে ঋণ বিতরণ। ২০১০ সালের পর প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ঋণ পাননি কোনো খামারি। ফলে যে খামারগুলো টিকে আছে, তার মধ্যে অনেকটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে, গাইবান্দা উপজেলায় বছরে ডিমের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ পিস। কিন্তু ২ কোটি ৪০ লাখ পিস ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এতে বছরে ডিমের ঘাটতি ১ কোটি ১০ লাখ পিস। বছরে মাংসের চাহিদা ১৪ হাজার ৪০০ টন। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মাংস পাওয়া গেছে ১ হাজার ২০০ টন। মাংস প্রাপ্তির হার ৭৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। ঘাটতি ২৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, মুরগির খামার কমতে থাকায় ডিমের ঘাটতি বাড়তে পারে। মাংস উৎপাদন কমবে। রমজানে দেখা দেবে সংকট। এটি কাটাতে হলে আমদানি বাড়াতে হবে। গ্রামের খামারি আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবসা টেকানো যাচ্ছে না। অথচ প্রাণিসম্পদ দপ্তর ঋণও দিচ্ছে না। ব্যাংক ঋণও পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের নিয়মে আটকা পড়ছেন খামারিরা। মুরগির খামারে কাজ করা আলতাফ মিয়া বলেন, খামার মালিকরা খামারে কাজ করা শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়েছেন। শ্রমিক ও মালিকদের বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।,জানা গেছে, ২০২১ সালে সাদুল্যাপুরে মুরগির খামার ছিল ৪৮২টি। তবে করোনাকালে দু’বছরে বন্ধ হয়েছে ১৯২টি। সরকারি প্রণোদনা হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু পেয়েছে মাত্র ৯৫টি খামার। ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। অবশ্য অনুদান পেয়েও কিছু করতে পারেননি খামারিরা। বসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। উপজেলা মুরগি খামার মালিক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম জানান, তিনি নিজের খামারই বন্ধ রেখেছেন। কারণ, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ নেই। উৎপাদন খরচ উঠছে না। শহরের ডিনার পোলট্রির ম্যানেজার জ্যোতিষ চন্দ্র সরকার বলেন, ২০২১ সালে এক দিন বয়সী একটি মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ২০ টাকা। বর্তমানে সে বাচ্চা ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার ফিড প্রতি কেজি এখন ৭৮ টাকা। ২০২১ সালে ছিল ৪৬ টাকা কেজি। এ জন্য অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছেন খামারিয়া।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায়, প্রকল্প, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সর্বশেষ ২০১০ সালে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এই দপ্তর থেকে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ১৬৭ খামারি এ ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। এরই মধ্যে ঋণের ৭ লাখ ৮ হাজার ৩৫ টাকা আদায় হয়েছে। ঋণ বিতরণ বন্ধের কারণ জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে আবার ঋণ বিতরণ শুরু হবে। ণী ব্যাংক সাদুল্যাপুর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান সরকার বলেন, ব্যাংকের সব শর্ত মেনে ঋণ নিতে হবে। একই নিয়মের কথা জানান সোনালী ব্যাংক সাদুল্যাপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার এ টি এম ফেরদৌস কবির। এদিকে, উপজেলায় প্রতিবছর গরুর দুধের চাহিদা ২২ হাজার টন। কিন্তু ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া গেছে এক হাজার ৮৩৩ টন। দুধ প্রাপ্তির হার ৬৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৩২ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। রমজানে সংকট প্রকট হতে পারে।
মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় বছরে মাছের চাহিদা ৫ হাজার ৮৫৪ টন। কিন্তু বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ৪ হাজার ৫৭৬ টন। মাছের ঘাটতি ১ হাজার ২৭৮ টন। এ জন্য রমজানে মাছের সংকট হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, এখানকার ৪০ শতাংশ মুরগির খামার এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে। অথচ সামগ্রিক পরিবেশ পোলট্রি ব্যবসার অনুকূলে। মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের দাম সহনীয় না হলে খামারিদের টিকিয়ে রাখা যাবে না। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকারিভাবেই উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশকণ্ঠ/রাসু