দেশকণ্ঠ ডেস্ক : নিউইয়র্কে রবিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জুইজ সেণ্টার, জ্যাকসন হাইস্টস, নিউইয়র্কে জেনোসাইড ‘৭১ ফাউণ্ডেশন ইউএসএ এর উদ্যোগে জেনোসাইডে ভিকটিমদের স্মরণ, সম্মান, শ্রদ্ধা ও একাওুরের জেনোসাইডের বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন এবং জেনোসাইড প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যম পালিত হলো ২৫ মার্চ জাতীয় জেনোসাইড দিবস।
শুরুতেই নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা ও ২৫ মার্চ এর বর্বরচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অন্ধকারে ১ মিনিট নিস্তব্ধতা পালন করা হয়। সূচিতে একাওরে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইড(গণহত্যা) এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা, কবিতা আবৃওি, তথ্য চিত্র প্রদর্শন-‘মুক্তির নারী’ এবং জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর স্বারকলিপি প্রদান।
জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, ইউএসএ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর এর সভাপতিত্বে এবং আবৃওিকার গোপন সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ নিউইয়র্কস্থ কনস্যুলেটের মিনিস্টার আয়েসা হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর মনাসির উদ্দিন, ফজলুর রহমান, রমেশ নাথ,ইঞ্জি. মোহম্মদ আলী সিদ্দিকী, এ্যাড. বকতিয়ার আলী ও জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ। কবিতা আবৃতি করেন গোপন সাহা, শুল্কা রায় ও শিবলী সাদেক। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজা রহমান, জলি কর, মৌগন্ধা আচার্য্য, রূপালী ঘোষ, মৃনাল ঘোষ ও গোপন সাহা।
বক্তারা বলেন, একাত্তরের ২৫শে মার্চ ভয়াল গণহত্যার সেই কালরাএি। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন। বাঙ্গালীর স্বাধীনতার ইতিহাসের নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় সব ঘটনা ঘটেছিল সেই রাতে। দিবসটি বাঙ্গালীর মুক্তির ইতিহাসে কালরাত হিসাবে চিরজীবন রক্তের অক্ষরে লেখা থাকবে। পঁচিশে মার্চের সেই ভয়াল কালরাতে শুরু হওয়া গণহত্যায় যাঁরা প্রান উৎসর্গ করেছিল তাঁদের স্মরন, বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে শুরু হওয়া গণহত্যার (জেনোসাইড) প্রায় ৪৬ বছর পর, বিগত ১১ মার্চ, ২০১৭ সনে জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ফলে দেশ ও বিদেশ জুড়ে এই দিনটি জাতীয় গণহত্যা(জেনোসাইড) দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে ভিন্ন মাত্রায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার নির্মম সাক্ষীও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়া প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের পরও একাওরের এতবড় গণহত্যা (জেনোসাইড) আজও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেনি! ১৯৭৫ সালের পর সরকার গুলো রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই গণহত্যা (জেনোসাইড) এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। বিশ্ব সম্প্রদায়ও চরম অবহেলা দেখিছে বাংলাদেশের ক্ষেএে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই অনীহা ও ব্যর্থতার ফলে বিশ্বে একের পর এক গণহত্যা (জেনোসাইড) অব্যাহত রয়েছে। আজকের এই দিনে প্রতিজ্ঞা হোক যে কোন মূল্যে একাওরের গণহত্যার (জেনোসাইড) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লড়াইয়ে আমরা অবিচল থাকবো।
বক্তারা আরো বলেন- একাত্তরের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অত্যাবশক। স্বীকৃতি আদায়ে কূটনীতি আরো জোড়ালো করার ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করেন তারা। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়ার বিভিন্ন মতামতসহ একাত্তরের জেনোসাইডের যথেষ্ট দলিল, তথ্যচিত্রসহ বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও চলছে। এসংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় জেনোসাইড বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। একাত্তরের ৯ মাসে বাংলাদেশে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক, তা ‘জেনোসাইড’ হিসেবেই চিহ্নিত হবে, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী যে জেনোসাইড চালিয়েছিল তার নির্মম সাক্ষীও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়া প্রকাশিত হয়েছিল, যার বিষদ বর্ণনা রয়েছে।
ইতিমধ্যে অনেকগুলো বিষয়ের অগ্রগতি হয়েছে। ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি লাভ; ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসাবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ; জেনোসাইড বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশী; আমেরিকাসহ বিদেশে ৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে সংঘটিত একাওরের জেনোসাইড বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে; জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী জননেএী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে একাত্তরের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তোলেন এবং তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান; ঢাকায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) গত সম্মেলনে বাংলদেশের মূল এজেন্ডা ছিল ‘একাওরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়’। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের এই সম্মেলনে একাওরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ অনেক খানি প্রশস্ত হয়েছে। এটাকে কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আরো সামনে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। মার্কিন কংগ্রেসে ১৯৭১-এর জেনোসাইড স্বীকৃতির প্রস্তাব উত্থাপন-গত ১৫ অক্টোবর, ২০২২; দুই মার্কিন আইনপ্রণেতা, রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাবট এবং ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্না, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডের ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। বিলটির কিছু অংশে ভাষাগত ত্রুটি সংশোধন সাপেক্ষে বিলটি সমর্থন যোগ্য। বর্তমান এই বিলটিতে কংগ্রেসম্যানগন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে ‘জেনোসাইডে ভিকটিম লক্ষ লক্ষ মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য আমাদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে দেওয়া উচিত নয়। তারা আরো উল্লেখ করেছেন-জেনোসাইড স্বীকার করা ঐতিহাসিক রেকর্ডকে শক্তিশালী করে, আমেরিকানদের শিক্ষিত করে এবং অপরাধীদের জানাতে দেয় যে, এই ধরনের অপরাধ হলে সহ্য করা হবে না ‘
৫১ বছর পর ১৯৭১ সালের সবচেয়ে নৃশংস জেনোসাইড, যা প্রায় বিস্মৃত ছিল, তা মার্কিন কংগ্রেসে স্বীকৃতি পেতে উপস্থাপিত হয়েছে। এটাকে ইতিবাচক বিবেচনায় নিয়ে সামনে এগুনো বাঞ্ছনীয়। সংগঠটি একাওরের গণহত্যার (জেনোসাইড) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লড়াইয়ে অবিচল থাকার ঘোষণা করে। পাশাপাশি তারা সংগঠনের পক্ষ নৃশংস জেনোসাইড সর্ম্পকিত থেকে ৮ দফা সুপারিশমালা পাঠ করে।
দেশকণ্ঠ/আসো