দেশকণ্ঠ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়ে গেছে তোড়জোড়। গণতন্ত্রের অভূতপূর্ব এই লড়াই শুরু হয় এক বছর বা তারও আগে থেকে। প্রথমে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান দল থেকে প্রাইমারি নির্বাচনে টিকে থাকতে হয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের। তারপর চূড়ান্ত পর্বে গিয়ে নির্বাচন। এই নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে নির্বাচনী পেপারওয়ার্ক জমা দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র (৬৯)। তিনি একজন পরিবেশবাদী আইনজীবী। আবেদনপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার প্রচারণা বিষয়ক কোষাধ্যক্ষ জন ই সুলিভান। ঘাতকের হাতে নিহত সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডির ছেলে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। তিনি টিকাবিরোধী একজন জোরালো অবস্থানকারী ও ক্যাম্পেইনার। এসব কারণে ২০২১ সালে তার অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম।
চূড়ান্ত দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে চমৎকার এক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রাইমারিতে অবতীর্ণ হতে হয় ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের প্রতিজন প্রার্থীকে। তাতে প্রতিটি দলে আলাদা আলাদা ভোট হয়। সেই প্রাইমারি ভোটে নির্বাচিত হয়ে যে প্রার্থী চূড়ান্ত হন, তিনিই হন সংশ্লিষ্ট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে চূড়ান্ত প্রার্থী। বিষয়টি খুব কঠিন। এখানে প্রভাব বা দলীয় ক্ষমতা বড় বিষয় নয়। প্রতিজন প্রার্থীকে বড় রকম পরীক্ষা দিতে হয়। প্রাইমারি থেকেই সেই পরীক্ষা শুরু হয়। এই নির্বাচনে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র হবেন ডেমোক্রেটিক দলের বাইরে থেকে যোগ দেয়া একজন প্রার্থী।
ডেমোক্রেটিক দল থেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ইঙ্গিত এরই মধ্যে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, এপ্রিলের শুরুতে তিনি প্রচারণা শুরু করতে পারেন। তবে সহযোগীরা বলেছেন, তার এই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বিবিসি’র মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ রিপোর্ট করেছে যে, এই গ্রীষ্মের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারেন। ওদিকে গত মাসে আরেকজন ডেমোক্রেট ম্যারিয়ানে উইলিয়ামসন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে যোগ দিয়েছেন।
এর আগে মার্চে কেনেডি টুইটারে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার কথা বিবেচনা করছেন। ওই সময় তিনি বলেন, যদি আমি নির্বাচন করি, আমার শীর্ষ অগ্রাধিকার হবে রাষ্ট্র এবং করপোরেট পাওয়ারগুলোর মধ্যে যে দুর্নীতি গড়ে উঠেছে তার ইতি ঘটানো। এই দুর্নীতি আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। আমাদের সুন্দর ভূমিকে এবং পানিকে দূষিত করে দিচ্ছে। আমাদের সন্তানদের বিষ প্রয়োগ করছে। আমাদের মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতাকে কেড়ে নিচ্ছে।
মার্চে নিউ হ্যাম্পশায়ারে এক জনাকীর্ণ সমাবেশে রবার্ট এফ কেনেডি বলেন, তিনি সবচেয়ে বড় বাধা অতিক্রম করে এসেছেন। তা হলো তার স্ত্রীর তরফ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন। রবার্ট এফ কেনেডি একটি পরিবেশ বিষয়ক আইনি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা। নিউ ইয়র্কের হাডসন নদীর পানি পরিষ্কার করার কাজ করছেন তারা। এ ছাড়া পরিষ্কার পানি ইস্যুতে প্রচারণা চালাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিনি টিকাবিরোধী হওয়ায় তীব্র সমালোচিত হচ্ছেন। এমনকি তার নিজের পরিবার থেকেই সমালোচিত হচ্ছেন। ২০২১ সালে টিকা ইস্যুতে তাকে খুবই বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছেন তার বোন কেরি কেনেডি। ২০১৯ সালে পরিবারের অন্য তিনজন সদস্য পলিটিকোতে মতামত কলামে তার টিকাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা জানিয়েছেন। তার বোন ক্যাথলিন কেনেডি টাউনসেন্ড, ভাই জোসেফ পি কেনেডি দ্বিতীয় এবং ভাইঝি মায়েভ কেনেডি ম্যাককিন বলেছেন, তার দৃষ্টিভঙ্গি ভয়াবহভাবে ভুল। এর ভয়াবহ পরিণতি আছে বলেও তারা মনে করেন।
টিকাবিরোধী গ্রুপ চিলড্রেন্স হেলথ ডিফেন্স প্রতিষ্ঠা করেন রবার্ট এফ কেনেডি। কিন্তু তাদের টিকাবিরোধী প্রচারণার কারণে ২০২২ ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা মেডিকেল বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে কোম্পানির পলিসি লঙ্ঘন করছিলেন।
দেশকণ্ঠ/আসো