দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন: এক মাস সিয়াম সাধনার পর শনিবার ২২ এপ্রিল যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করা হবে। ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে রেডিও-টিভিতে-পাড়া-মহল্লায় বেজে উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই অতিচেনা গানের প্রিয় সুর, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ...।’ ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে জাতীয় ঈদগাহে। এ জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানীর হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দান।
করোনাভাইরাসের কারণে বিগত কয়েক বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করতে হয়েছে। এবার করোনার প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদ ঘিরে আগের মতোই আনন্দ-উচ্ছ্বাস ফিরে এসেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে রাজধানীর হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। রাষ্ট্রপতি ছাড়াও বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকেরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় ঈদগাহে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত সম্ভব না হলে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল নয়টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। শত বছরের ঐতিহ্য কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই যেন ঈদের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করতে পারে, সে জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে সমাজের সচ্ছল ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ঈদ আমাদের একটি সর্বজনীন উৎসব। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে, গ্রামগঞ্জে, সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে। সব ভেদাভেদ ভুলে এ দিন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, মানবতার মুক্তির দিশারি হিসেবে ইসলামের মর্মার্থ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, বিশ্ব ভরে উঠুক শান্তি আর সৌহার্দ্যে—পবিত্র ঈদুল ফিতরে এটাই তাঁর প্রত্যাশা। দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, ‘ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় তাঁর বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ভিডিও বার্তাও দিয়েছেন। তাতে উদ্যাপনকালে ঈদের আনন্দকে কাছের মানুষ এবং সমাজের দরিদ্র ও দুস্থ মানুষদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আপনারা সবাই ভালো ও নিরাপদে থাকবেন, ঈদ মোবারক।’
ঈদ উদ্যাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, প্রবীণনিবাস, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, সেফহোমস, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র, দুস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করবে।
ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত বেলা পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা উত্তর সিটিতে ২ হাজার ৭৭টি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫টি করে মোট ২৭০টি স্থানে করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আর দক্ষিণ সিটির আয়োজনে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া এলাকার মসজিদগুলোতে ঈদ জামাত আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশকণ্ঠ/আসো