দেশকন্ঠ অনলাইন : সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দীর্ঘ দুই মাসের ঝড়-ঝঞ্ঝা সামলিয়ে অবশেষে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় এসে পৌঁছেছে। জাহাজটির দায়িত্ব নিতে চট্টগ্রাম থেকে ২৩ নাবিকের নতুন একটি দল কুতুবদিয়া গেছে।১৩ মে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে জাহাজটি কুতুবদিয়ায় নোঙর করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন। চট্টগ্রাম থেকে এমভি জাহান মণি-৩ নামে একটি লাইটার জাহাজে ২৩ নাবিকের নতুন একটি টিম এমভি আবদুল্লাহর দায়িত্ব বুঝে নিতে সোমবার (আজ) বিকেলে রওনা দিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দেওয়া এমভি জাহান মণি-৩ রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে কুতুবদিয়া পৌঁছাবে।
তিনি জানান, এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা জাহাজের দায়িত্ব নতুন টিমের কাছে হস্তান্তর করে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা নাগাদ জাহান মণি-৩ এ করে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট কেএসআরএম জেটিতে পৌঁছাবেন। সেখানে নাবিকদের বরণ করে নেয়া হবে। আর চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া ২৩ সদস্যের নাবিক টিম কুতুবদিয়ায় কিছু মালামাল খালাস শেষে বাকি মালামাল খালাসের জন্য এমভি আবদুল্লাহকে ১৫ মে নিয়ে যাবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে। ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর বোঝাই করে গত ২৯ এপ্রিল জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর ত্যাগ করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।
আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।
১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে একই দিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়। দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।
২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
দেশকন্ঠ//