মৃণাল বন্দ্য, কানাডা থেকে
অভিভাসীবান্ধব হিসেবে বরাবরই কানাডা একটি জনপ্রিয় দেশ। মাল্টি কালচারের এই দেশে আশ্রয় পেয়েছে বিভিন্ন দেশের নিপীড়িত মানুষরা। তবে গত ৪/৫ বছরে যে পরিমাণ মানুষ কানাডায় প্রবেশ করেছে, তাতে নাভিশ্বাস উঠেছে স্থানীয়দের। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের অস্বাভাবিক উর্ধগতি, আবাসিক সংকট আর সাম্প্রতিক সময়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থতি এমন দাঁড়িয়েছে যে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে ট্রুডো সরকারের। এর উপর আবার আগামী বছর কানাডায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যে কারণে এখন একের পর এক নিয়ম পরিবর্তন করে যাচ্ছে কানাডা সরকার। এর প্রভাব পড়েছে সীমান্তে। শুধু অবৈধ নয়, বৈধ ভিসা নিয়েও কানাডায় ঢুকতে পারছেন না অনেকে। সীমান্ত থেকে, বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের।
গত জুন মাসে দেশটির প্রত্যাখ্যান করা ভিজিট ভিসার আবেদনের অনুপাত ভিসা অনুমোদনের আবেদনের হারের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। অর্থাৎ দেশটির ভিসা না পাওয়ার হার করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে সর্বোচ্চে পৌঁছানোর পর যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি ছিল গত জুনে। দেশটির অভিবাসন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মে এবং জুন মাসে ভিসা অনুমোদনের চেয়ে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বেশি। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আসন পূরণ করতে পারেনি এই ভিসা জটিলতার কারণে।
ভিসা ইস্যু হ্রাস, বৈধ নথি নিয়ে সীমান্তে পৌঁছানোদের বেশি সংখ্যায় ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিদেশি পর্যটক ও অস্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য দেশে প্রবেশের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে কানাডা। কানাডার অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার লক্ষ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দেশটির সরকারি এক নথিতে দেখা গেছে।
আগামী বছর কানাডায় যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নেতৃত্বাধীন উদারপন্থী সরকার পিছিয়ে রয়েছে। যে কারণে বিদেশি ভ্রমণকারী, অস্থায়ী বাসিন্দা ছাড়াও স্থায়ী অভিবাসীদের সংখ্যা হ্রাসের চেষ্টা করছে ট্রুডোর সরকার। দেশটিতে বর্তমানে আবাসন সংকট ও বাসা ভাড়া বৃদ্ধির জন্য অভিবাসীদের দায়ী করা হয়।
অতীতে নতুন করে আসা অভিবাসীদের সাদরে গ্রহণ করার রেকর্ড রয়েছে কানাডীয়দের। তবে সাম্প্রতিক এক জরিপে ক্রমবর্ধমানসংখ্যক কানাডীয় বলেছেন, দেশটি অনেক বেশি অভিবাসীকে গ্রহণ করেছে। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, এই অবস্থান সীমান্ত ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে ভূমিকা রাখছে। গত জুলাইয়ে কানাডা ৫ হাজার ৮৫৩ জন ভ্রমণকারীকে দেশটিতে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। তাদের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী, কর্মী ও পর্যটকও ছিলেন। দেশটিতে এক মাসে এতসংখ্যক মানুষকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। নথিতে দেখা যায়, দেশটির সীমান্ত কর্মকর্তারা চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে গড়ে ৩ হাজার ৭২৭ জন করে বিদেশি ভ্রমণকারীকে ফিরিয়ে দিয়েছেন; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বা ৬৩৩ জন বেশি।
এছাড়া পৃথকভাবে দেশটির কর্মকর্তারা গত জুলাইয়ে ২৮৫ জন ভিসাধারীকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচনা করেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই মাসে কানাডার ভিসাধারীদের দেশটিতে প্রবেশে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করার হার ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর যেকোনও মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ। কানাডার সীমান্ত সেবা সংস্থার (সিবিএসএ) একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, প্রবেশে অযোগ্য বিবেচনার বিষয়টি অভিবাসনের ধরন বা নীতির পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। এছাড়া এই বিষয়ে ভিসাধারীদের ব্যক্তিগত বিবরণ অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট কোনও নীতি পরিবর্তন হয়েছে কি না সেটি জানায়নি সিবিএসএ। ‘‘কানাডায় আসা ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সিবিএসএর ভূমিকা, নীতি এবং এসবের চর্চা সবসময়ই করা হয়েছে। এটার পরিবর্তিন হয়নি বলেন ওই মুখপাত্র। একই সঙ্গে কানাডার অভিবাসন বিভাগ বর্তমানে ভিসার অনুমোদন কমিয়ে দিয়েছে।
দেশকণ্ঠ/আসো