• মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ১১:৩৩    ঢাকা সময়: ২১:৩৩
ইতালির গল্প

সাগর পারাপারের জাহাজ

  • শিল্প-সাহিত্য       
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪       
  • ৩৯
  •       
  • A PHP Error was encountered

    Severity: Notice

    Message: Undefined offset: 1

    Filename: public/news_details.php

    Line Number: 60

    Backtrace:

    File: /home/teamdjango/public_html/deshkontho.com/application/views/public/news_details.php
    Line: 60
    Function: _error_handler

    File: /home/teamdjango/public_html/deshkontho.com/application/controllers/Public_view.php
    Line: 72
    Function: view

    File: /home/teamdjango/public_html/deshkontho.com/index.php
    Line: 315
    Function: require_once

অনুবাদ: ফজল হাসান, দেশকন্ঠ অনলাইন :  আমার দাদী যখন ইন্তেকাল করেন, তার আগে আমি অনেক বছর তাকে দেখেছি। তাই তিনি যখন ‘আইল’ শহরে মারা যান, আমি কাঁদিনি। সেখানেই দাদীর সারা জীবন কেটেছে। বরং অবাক হয়েছিলাম যে, একই রাতে, তার মৃত্যুর রাতে, আমি তাকে স্বপ্নে দেখেছি। ইউরোপে পাড়ি জমানোর পর এই প্রথম দাদী আমার স্বপ্নে আবির্ভূত হন। আসলে যে কেউ বলতে পারে যে, তিনি আমার কাছে মোটেই উপস্থিত হননি; মৃত্যুর রাতেই আমি তাকে জাগিয়ে তুলেছি।

আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার দাদী সমুদ্রের পানিতে কাপড়চোপড় ধুচ্ছিলেন এবং তার চোখেমুখে ছিল গম্ভীর ভাব; যেমনটি সারা জীবন ছিল। আমি যখন ঘুম থেকে জেগে উঠি, আমার মনে পড়ে গাছের গুঁড়ির মতো খাড়া আর অনমনীয়, কোমরে শক্ত করে বাঁধা ‘গান্তিনো’ এবং ঘাড়ের কাছে গলায় ছিল লাল রুমাল। দৃশ্যটা অনেকটা দৃষ্টিনন্দন অঙ্গভঙ্গি করে তোলা ছবির মতো। আমার দাদী একটা থামের ওপর বসে আছেন, একেবারে স্থির; সমুদ্রকে ঘৃণা করলেও তার সম্মুখে পানির মধ্যে ছিল ঘূর্ণি স্রোত।

সেই সময় আমার এক বান্ধবী ছিল। আমি তাকে স্বপ্ন এবং আমার দাদী সম্পর্কে বলেছিলাম। আমি স্বপ্নের কথা এমনভাবে বলিনি, যা বিশেষ কিংবা আনুষ্ঠানিক অথবা নাটকীয়। যা ঘটেছিল, আমি কেবল তাকে তাই বলেছি। আমার বান্ধবী কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। তারপর সে একটি বিশেষ, আনুষ্ঠানিক এবং নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেছিল যে, সেই স্বপ্ন দেখার জন্য আমার এবং দাদীর মধ্যে অবশ্যই একটি দৃঢ় বন্ধন ছিল।

আমি আমাদের বন্ধনের কথা ভাবলাম এবং আরও ভাবলাম যে, বন্ধন না-থাকাটা হয়তো দুর্ভাগ্যজনক হতো, ঠিক তেমনি দুর্ভাগ্য যে, আমার দাদী এতদিন পরে কেবল আমার স্বপ্নের ভেতর এসে হাজির হয়েছেন। তাই আমি বান্ধবীকে ডেকে ছোটবেলায় দেখা সমুদ্র দেখিয়েছি এবং আবারও শুনতে পেয়েছি যে, পাথরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রাক্ষসরা হিস্‌ হিস্‌ করে আমার নাম ধরে ডাকছে। আমি পেছন ফিরে না-তাকিয়ে অনেক দূরে চলে যাই, যেখানে আগরবাতি জ্বালানো ছিল এবং জ্বিন আমাকে ধরতে পারেনি।

***

আমি দাদীকে ডেকেছিলাম, যিনি সমুদ্র থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। কারণ তিনি সমুদ্র পছন্দ করতেন না। তিনি আমাকে আইল দাওয়াদ পাহাড়ে ওঠার রাস্তা দেখিয়েছিলেন, যা উপত্যকার মাঝে লুকিয়ে আছে। আইল বাদে উপকূল থেকে কিছুটা দূরে, যেখান থেকে আজকাল জলদস্যুরা সমুদ্র যাত্রা শুরু করে। তিনি সেই গ্রামটি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে আমার বাবা জন্মগ্রহণ করেছেন। আমার বাবা সেখানে নিয়ে যাওয়ার  সময় আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দাদী সমস্ত কিছু দেখিয়েছেন এবং একটি নদী সেই জায়গাটি অতিক্রম করেছিল এবং সেখানে ছিল প্রচুর পশুপ্রাণী এবং পর্যাপ্ত পরিমানে তরল দুধ।

নদীর উজানে অবস্থিত দাদীর গ্রামের সঙ্গে সমুদ্রের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
আমার দাদী নিজেকে সমুদ্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। এখনও মনে পড়ে, তিনি তার প্রথম সন্তানকে বুকের সঙ্গে শক্ত করে ধরে রাখার গল্প করেছিলেন। তখন তিনি আমাকে তার সেই সময়ের যুবক স্বামী এবং জাহাজডুবির কথাও বলেছিলেন। তিনি তার হাত দুলিয়ে এমন একটি গান গেয়েছিলেন, যা সবাই জানে:

‘দুন বাদ মারেয়সা, বাড্ডা দুন বে মারেয়সা, মায়দ্দি বে সিত্তা, মায়দ্দি আইয়ো মালমাল বে সিত্তা, একটি জাহাজ সমুদ্র অতিক্রম করে যায়, একটি নৌকা সমুদ্রের মধ্য দিয়ে চলে যায়, একটি মৃতদেহ সমুদ্রের স্রোতে ভেসে যায়, ধূপ এবং গন্ধরস বহন করে, ধূপ এবং গন্ধরস বহন করে।’

চামড়া ও পশু বোঝাই জাহাজগুলো আইল বাদেয় বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এবং শুধু খেজুর ও চাল ভর্তি করে ফিরে আসে। তার স্বামী ছিলেন একজন তরুণ ব্যবসায়ী, যিনি সমুদ্রে ডুবে মারা যান, যখন আমার দাদী তার প্রথম কন্যা সন্তানের প্রত্যাশা করছিলেন। আর পাহাড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা সেই একই আইল শহরে আমার বাবার জন্ম। তার নাম ‘আফ দেবেইল (বাতাসের মুখ)’। বাবার প্রবাহিত কণ্ঠস্বর এবং অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য এই নাম রাখা হয়েছিল।

হাড়গোড়ের মতো পরিষ্কার আমাদের মোগাদিশুর সাদা বাড়িতে, যা দেখতে উপকূলের ধ্বংসস্তূপের মতো, আমার বাবার জন্ম হয়নি। দাদী কেবল মোগাদিশুতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কারণ তিনি কখনই আইল শহর ছেড়ে যাননি, তিনি কখনই তার ঘরবাড়ি ছেড়ে যাননি, এমনকি তিনি কখনই পাহাড়ের নির্মল বাতাসের গ্রাম ছেড়ে যাননি, যেখানে রয়েছে পর্যাপ্ত পানি এবং অসংখ্য পশু-পাখির উপস্থিতি। আমি কখনো সেই গ্রামে যাইনি, দাদীর বাড়ি দেখিনি এবং খাল-বিলে সাঁতার কাটিনি। আমি শুধু একদিন সকালে কেঁদেছিলাম, আমার বাবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য—আমি তাকিয়ে দেখছিলাম তিনি উত্তরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

আইল জায়গাটি, যা কেবল একটি গ্রাম ছিল, তারা বলেন যে, আজকাল বিলাসবহুল গাড়ি চালানো হয় এবং পুরুষরা তাদের দাঁতের ফাঁকে সোনার মুদ্রা দেখায়। বাবা এখন আর খেজুর এবং দুধে ভরপুর পাহাড়ি জায়গায় বার্ধক্যের স্বপ্ন দেখেন না। তার মা উপত্যকায় একটি ফাঁকা জায়গা রেখে গিয়েছেন। তারা আরও বলেন যে, উপকূল এলাকায় সংক্রমন হয় এবং শিশুরা মুখ ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে।

***

বেশ কিছুদিন ধরেই উপকূলের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপকূলের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হয়েছে এবং ভারসাম্য ভেঙে গেছে। বালির ওপর দিয়ে হাঁটার সময় যে কেউ আলকাতরার দাগ দেখতে পারে কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের টুকরো দিয়ে পা কাটতে পারে।

তারা আমাদের এমন বাচ্চাদের কথা বলেছিল, যারা একটি খেলনা বলের জন্য সমুদ্রে দৌঁড়ে গিয়েছিল এবং চোখের পলকে ঢেউয়ের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছিল। এবার দুর্ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তারা জ্বীন ছিল না। এ ছাড়া পাথরের মধ্যে মানুষখেকো কোনো সতর্ক বাণী ছিল না, বরং হাঙ্গর, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং হিংস্র প্রাণী, মাঝে মধ্যে ধরা পড়ে। লোকজন সেগুলো সাগর পাড়ে টেনে নিয়ে আসে এবং তারপর ক্রুদ্ধ জনতা হত্যা করে।

আশির দশকের শুরুতে মোগাদিশুর সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকা দ্বিমুখী দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। আমাদের নতুন বন্দর এবং অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় কসাইখানা, যেখানে মক্কার দিকে মাথা রেখে পশুদের জবাই করা হয়, নির্মাণের জন্য আর্থিক সাহায্য দিয়েছিল। বড় জাহাজগুলোর জন্য জায়গা তৈরি করতে প্রবাল-প্রাচীরের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস করা হয়েছিল এবং কসাইখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়েছিল।

বিধ্বস্ত প্রবাল-প্রাচীর থেকে রক্তের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পাগলপারা হাঙরগুলো তীরের দিকে এগিয়ে আসত। একসময় সমুদ্র প্রজাপতি মাছের নানা রঙের কঙ্কাল আর খোলসে ভরা ছিল। অথচ এখন শুধু কাটা লাশ আর মৃত্যুর গন্ধ ছড়াচ্ছে। দেশ নিজেই টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।

***

সমুদ্রের শব্দ এবং তার গর্জন আমার কাছে শৈশবের বাদ্যযন্ত্রের মূর্চ্ছণা।
গলিত সীসার মতো সমুদ্র গর্জে ওঠে, যা অনেকের হৃদয় বিকৃত করতে পারে। বালিতে যে কারোর পা নোনা পানি আর আয়োডিনের শিকড় হয়ে যেতে পারে এবং হাড় হতে পারে সিলিকন আর লবণের জমাট বাধা পিন্ড।
আমার সমুদ্র ছিল লাল ঝিনুক ও পর্যাপ্ত প্রবাল, জেলিফিশ এবং বালির মধ্যে কোনো এক গোপন গহ্বর।
যুদ্ধ এবং ১৯৯১ সালে নির্বাসনের পর থেকে ঝলমলে আলোকসজ্জা এবং খনন করা দেয়ালের মোগাদিশু এমন এক শহর, যার রাস্তাঘাট এখন আর আমার মনে নেই। অনেক বছর হয়ে গেছে আমি সমুদ্র দর্শন করিনি। আবার যখন সমুদ্র দেখলাম, তা ছিল রোম শহরের দক্ষিণে সাবাউদিয়ায়। কেউ কেউ হেসেছিল, কারণ আমি ভেবেছিলাম যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জোয়ার এলে সমুদ্র ফুলে উঠবে। তাই পানির কাছে তোয়ালে রাখা ঠিক কাজ হবে না—সমুদ্রের ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ইতালির ঢেউ, তারা আমাকে বলেছিল, সব কিছু নিয়ে তলিয়ে যায় না।

ইতালির সমুদ্র এমন, যেখানে পানি কমে না।
নিরাপদ জায়গায় যেতে হলে সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়, যা ভূমধ্যসাগর সাগর বা আরবীয় শ্বেত সাগরের মাঝ বরাবর। শ্বেত সাগরের অনেকগুলো উপকূল আছে। কিন্তু আমার উপকূল থেকে, আফ্রিকার অন্তরীপ থেকে, শ্বেত সাগরে পৌঁছানোর আগে কেউ কেউ সমুদ্রকে সাহসী করে তুলেছিল। তারা জানতে চায় আসলেই এতদূর যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা।

***

কেউ যদি সাগর পাড়ের বাড়িঘরের কাছে যায়, তাহলে অনেক মহিলা তাকে তাদের গল্প বলতে চাইবে। কেউ কেউ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতোমধ্যে ওপারে চলে এসেছেন। কেউ কেউ আবার অপর পাড়ে যেতে ইচ্ছুক। অন্যরা অপেক্ষা করে ছেলে কিংবা ভাই, এমনকি প্রিয়তমার জন্য, যারা কিছুদিন আগে চলে গেছে। তারা দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সমুদ্র পারাপারের জাহাজের পাল অথবা আশেপাশে দিয়ে সাঁতারুদের চলন্ত যন্ত্রচালিত নৌকা নির্দেশ করে। তারা জানতে চায়, সমুদ্রে চলাচলের জাহাজগুলো কত বড়, কতগুলো তলা আছে এবং কতজন যাত্রী, বিশেষ করে তাদের সন্তানদের, তাদের প্রিয়জনদের ও তাদের ভাইবোনদের, ধারণ করতে পারে।

মহিলাদের মধ্যে একজন ওপরের দিকে তুলে তার হাত ঘুরায় এবং হাসে। তার নাম দাহাবো এবং তার পাশে একজন বান্ধবী রয়েছে। তারা বলে যে, তাদের বন্ধুত্ব অবিচ্ছেদ্য। তারা একসঙ্গে জাহাজ ভাঙার কাজ করেছে এবং তারা আর কখনো সমুদ্রে যাবে না।

সাগর পারাপারের জাহাজ এত পূর্ণ ছিল যে, সেখানে পোশাক পরিহিত লোকজন তাদের সমস্ত মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছিল। দাহাবো তাদের সবাইকে চিনত এবং তাদের হালকা পোশাক পরতে বলেছিল। জাহাজটি উপকূলের খুব কাছাকাছি উল্টে যায়। প্রত্যেকে চিৎকার করে অন্যদের নাম ধরে ডাকাডাকি করে এবং ভেসে থাকার জন্য তারা নাগালের মধ্যে যা কিছু পায়, তা ধরে রাখে। দাহাবো অন্ধকারে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে, কেননা সে সাঁতার জানে। সে বাইদোয়ায় জন্মগ্রহণ করেছে এবং নদীতে সাঁতার শিখেছে। সে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। কারণ যখন কেউ ডুবে যেতে থাকে, তখন সে আরেকবার নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য হাতের কাছে যা কিছু পায়, তাই আঁকড়ে ধরতে চায়।

রাত হয়ে গেছে এবং সে তার নাম ধরে ডাকার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। তারপর বাকিদের মধ্যে একজন কাছাকাছি আসে এবং সে সেই বন্ধু যার সঙ্গে তার তখনো খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তবুও সে তার নাম ধরে ডাকে, সাহায্য করো, আমাকে মরতে দিও না। দাহাবো একটা পাথর আঁকড়ে ধরে বলেছে, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, কিন্তু কথা দাও তুমি আমাকে নিচে টেনে নিয়ে যাবে না। তারপর পথ দেখানোর জন্য সে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়। বন্ধুটি তার পেছনে সাঁতার কাটতে থাকে এবং তারা একসঙ্গে পাথরের ওপর ওঠার জন্য নিখুঁত ঢেউয়ের অপেক্ষায় থাকে। ক্লান্তি দূর করার জন্য হাত-পা ছেড়ে তারা কিছুক্ষণ ওখানে শুয়ে থাকে। জাহাজ সার্চ লাইট জ্বালিয়ে কাছে আসে। প্রহরী জাহাজে থাকা যাত্রীরা দুজনকে ভিজে কাপড়ে কাঁপতে দেখে তাদের পোশাক খুলতে বলেন।

সুতরাং নিজের বুকের ওপর হাত রেখে দাহাবো বলল, সে বিব্রত বোধ করছে। কারণ ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সে অন্তর্বাস পরতে ভুলে গেছে। তার উরোজ এখন আর যুবতীর মতো নয়। একসময় দাহাবো প্রহরী জাহাজের সামনে নিজেকে অন্তর্বাস ছাড়া টপলেস আবিষ্কার করে। সুতরাং সে পুনরাবৃত্তি করে, তখনো তার হাত বুকের ওপর রয়েছে। সবসময় সে মহিলাদের বলে যে, তারা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে যেন অন্তর্বাস পরতে ভুলে না যায়।

পাদটীকা
আইল — সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব নুগাল অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক বন্দর শহর।
গান্তিনো — সোমালি মহিলাদের দৈনন্দিন জীবনের পোশাক। এটি একটি লম্বা কাপড়ের টুকরো, যা কাঁধে বেঁধে কোমরে জড়ানো হয়। বর্তমানে বিভিন্ন স্টাইল, রঙ এবং কাপড়ের হয়। তবে ঐতিহ্যগতভাবে গান্তিনোর কাপড় ছিল সাদা এবং চারপাশে কারুকাজ থাকত।

গল্পসূত্র

‘সাগর পারাপারের জাহাজ’ গল্পটি উবাহ ক্রিস্টিনা আলি ফারাহর ইংরেজিতে ‘অ্যা ডাউ ক্রসেস দ্য সী’ গল্পের অনুবাদ। ইতালীয় ভাষা থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন হোপ ক্যাম্পবেল গুস্তাফসন, যা ‘অ্যাসিম্পটোট জার্নাল’-এর ২০১৭ সালের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

লেখক পরিচিতি

সমকালীন সোমালি-ইতালীয় লেখক উবাহ ক্রিস্টিনা আলি ফারাহ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্প লেখক, কবি, নাট্যকার, শিক্ষক ও সমাজকর্মী। তার মা ইতালীয় এবং বাবা সোমালি। তিনি ১৯৭৩ সালে ইতালির ভেরোনায় জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু বেড়ে ওঠেন সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে। ১৯৯১ সালে সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানকার একটি ইতালীয় স্কুলে পড়াশোনা করেন। যুদ্ধের কারণে তিনি এবং তার পরিবার হাঙ্গেরিতে চলে যান, কিন্তু পরে ভেরোনায় ফিরে আসেন। তিনি আফ্রিকান স্টাডিজে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জণ করেন। ইতোমধ্যে তার তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে: মাদ্রে পিকোলা (২০০৭, যা ২০১১ সালে লিটল মাদার নামে ইংরেজিতে অনুবাদ); ইল কমান্ডান্টে দেল ফিউম (২০১৪, যা ২০২৩ সালে কমান্ডার অফ দ্য রিভার নামে ইংরেজিতে অনুবাদ) এবং লে স্ট্যাজিওনি ডেলা লুনা (২০২১)। তার ছোটোগল্প এবং কবিতা অনেক ইতালীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র, জার্নাল এবং সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০২০ সালে ছোটগল্পের একটি দ্বিভাষিক (ফরাসি এবং ইতালিয়ান) সংকলন প্রকাশ করেন। তিনি লিঙ্গুয়া মাদ্রে এবং ভিত্তোরিনি পুরস্কার সহ বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি সোমালিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের ‘ইউএনডিপি’-র পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
দেশকন্ঠ//

  মন্তব্য করুন
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।