দেশকন্ঠ অনলাইন : টেস্ট সিরিজ ড্র, ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ দাপুটে জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডজের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো আরও একটি দুর্দান্ত জয় পেয়েছে টাইগাররা। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
এই জয়ে ৬ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এই প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো টাইগাররা।
১২৯ রানের স্বল্প পুঁজি থেকেও ম্যাচ নিজেদের করে আনার পুরো কৃতিত্বটাই এদিন পাচ্ছেন বোলাররা। শুরুতে তাসকিন আহমেদ এবং শেখ মেহেদি হাসান নতুন বলে নিজেদের কাজটা একেবারেই ঠিকঠাক করেছেন। এরপর সেটাকে ধরে রেখেছিলেন তানজিম সাকিব। আগের ম্যাচে বেশ খরুচে বোলিং করলেও এদিন ছিলেন নিয়ন্ত্রিত।
রিশাদের জাদুকরী ১৭তম ওভারটা বাংলাদেশের জয় এনে দেয় একেবারেই হাতের নাগালে। আর শেষটা করেছেন এই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ।
হাসান মাহমুদের ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি পেয়েছিলেন ব্রেন্ডন কিং। পরের ওভারেই শেখ মাহেদিকে এক চার আর এক ছক্কায় ঝড়ের আভাস দেন জনসন চার্লস। অবশ্য সেটা আর হয়নি। তৃতীয় ওভারেই জোড়া উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম বলেই দারুণ এক লেংথ ডেলিভারিতে কিংকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানালেন তাসকিন। ৫ বলে ৮ রানে ফিরলেন। শেষ বলে ফ্লেচারকেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানালেন। ৪ বলে শূন্য রানে ফিরলেন ফ্লেচার।
চতুর্থ ওভারে এক বাউন্ডারি হজম করলেও জনসন চার্লসকে এলবিডব্লিউতে ফেরান শেখ মাহেদি। এরপরেই স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নিকোলাস পুরান। সপ্তম ওভারে তানজিম সাকিবের বলে স্লিপে আঙুলের ডগায় থাকা রভম্যান পাওয়েলের ক্যাচ ছেড়ে দেন সৌম্য। সেই আক্ষেপ অবশ্য বাড়েনি খুব একটা।
পরের ওভারেই হাসান মাহমুদের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ডেঞ্জারম্যান পাওয়েলকে ফেরান মিরাজ।
রোমারিও শেফার্ডকে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তানজিম সাকিব। ৪২ রানে ৬ উইকেটের পতন। এখান থেকেই অবশ্য উইন্ডিজদের জয়ের দিকে নিতে শুরু করেন চেজ-আকিল জুটি।
হাসানকে টানা দুই ছক্কা মেরে ম্যাচে ফেরে উইন্ডিজ। তবে পরের ওভারেই ডেঞ্জারম্যান চেজকে তুলে নেন রিশাদ। ৩৪ বলে ৩২ রান করে থামেন চেজ। পরের বলেই মোতিকে ফেরান রিশাদ। হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলেও তা হতে দেননি আলজারি জোসেফ।
তবে জোসেফকে পরের ওভারেই ফিরিয়েছেন তানজিম সাকিব। শেষ পর্যন্ত ১০২ রানেই থমকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ১৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। সমান দুটি করে উইকেট নেন তানজিম সাকিব, রিশাদ হোসেন ও মেহেদি হাসান। হাসান মাহমুদের শিকার একটি।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১১ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী লিটন আজও ফিরে গেছেন খালি হাতেই। ১০ বলে মাত্র ৩ রান করে আকিল হোসেনের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ৮ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটন ফিরতেই রোস্টন চেজের বলে বোল্ড হয়ে ৪ বলে মাত্র ২ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তানজিদ তামিম।
শুরুর ধাক্কা সামলে জুটি গড়েন সৌম্য সরকার ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৩৯ রানে সৌম্য সরকার ফিরে গেলে ২৮ রানে ভেঙে যায় এই জুটি। সৌম্যের বিদায়ে ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারায় টাইগাররা। পরের ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৫ বলে ২৬ রান করে আলজারি জোসেফের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ব্রান্ডন কিংয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
সৌম্য আর মিরাজের পথ ধরে দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান রিশাদ হোসেনও। ৪ বলে মাত্র ৫ রান করে গুড়াকেশ মোতির বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে মাত্র ৫২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোতিকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড মেহেদী। ১১ বলে ১১ রানে ফিরলেন। রান ঠিকমতো না হওয়ায় শেষ দিকে চড়াও হতে যাচ্ছিলেন জাকের আলী। কিন্তু ১৬.১ ওভারে মেরে খেলতে গিয়ে ২১ রানে তালুবন্দি হয়েছেন তিনি। ম্যাককয়ের বলে পাওয়েলের কাছে ক্যাচ দিয়েছেন জাকের আলী। তার ২০ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছয়।
এতে ৮৮ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ফলে শঙ্কা জাগে দলীয় ১০০ এর আগেই অলআউট হওয়ার। তবে শামীম হোসেন পাটোয়ারীর ১৭ বলে ৩৫ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রানে থামে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন গুড়াকেশ মোতি। একটি করে নিয়েছেন আকিল হোসেন, রোস্টন চেজ, আলজারি জোসেফ ও ওডেব ম্যাককয়।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন শামীম হোসেন।
সিরিজের শেষ ম্যাচ আগামী ১৮ ডিসেম্বর শুক্রবার।
দেশকন্ঠ/এআর