• বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৬:২৫    ঢাকা সময়: ১৬:২৫

দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি ছাত্রনেতাদের

  • শিক্ষা       
  • ১২ জানুয়ারি, ২০২৫       
  •       
  • ২১:৪৮:১৭

দেশকন্ঠ   অনলাইন : বক্তারা বলেছেন, দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করতে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।  বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট সোশাল ওয়েলফেয়ার নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘পরিবর্তনের ছাত্র রাজনীতি’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন।

এছাড়াও তারা ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়মিত সম্মেলন, রাজনৈতিক বিবেচনায় হলের সিট বণ্টন না করা, লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করা ও নিজ নিজ সংগঠনের আদর্শে অবিচল থাকার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম ইলিয়াসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ।

এতে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, হিউম্যান রাইটস একটিভিস্ট ও ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী, ইসলামী ছাত্র আন্দালন বাংলাদেশ’র সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ও ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী সাফায়াত সজল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা কলেজ শাখার সদস্যসচিব মো. মিল্লাদ হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির ঢাকা কলেজ শাখার আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান আফফান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি নাহিয়ান রহমান রাহাত, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি কামাল হোসেন সুমন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’র ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি মো. রিদওয়ানুল হক।

সংলাপ সঞ্চালনা করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী কেফায়েত হোসেন ও আবু সায়েম। নাজমুল হাসান বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো রাজনীতি করতে দেওয়া হতো না। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্বের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল।

তিনি বলেন, এখন যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতীতের মতো দখলদারিত্বের রাজনীতি না থাকে। যেকোনো ছাত্র সংগঠন যাতে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে নাজমুল আরও বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। ছাত্র সংসদই সাধারণ ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে।

সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, দেশের ছাত্র রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন এসেছে, তা হলো ডান, বাম ও সেন্ট্রিস্ট (মধ্য) রাজনীতিবিদরা এক জায়গায় বসতে পেরেছে। এই পরিবর্তন রাজনীতিতে একটি বড় ঘটনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কমন শত্রু হলো আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। আবার যেন তারা রাজনীতিতে ফিরে আসতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের প্রতিরোধ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

আব্দুল্লাহ বলেন, এখন আগের তুলনায় যেকোনো ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ মানুষ এখন প্রশ্ন করা শিখে গেছে। তাই বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করলে কারো জন্যই পরিস্থিতি ভালো হবে না।

বিশ্বের উন্নত দেশের রাজনীতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য ছাত্রনেতাদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কারো তাবেদারি করা ছাড়া হলের সিট পাওয়া এবং তিন বেলা নিজের খাবার নিশ্চিত করার পর কেউ যদি রাজনীতি করতে চায়, সেটা তার অধিকার। কিন্তু কাউকে যেন জোর করে রাজনীতি করতে বাধ্য করা না হয়।

সালমান সিদ্দিকী বলেন, ছাত্র রাজনীতির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আওয়ামী লীগের মতো একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো সম্ভব হয়েছে। যা ছাত্ররাজনীতির জন্য সোনালী ইতিহাস হয়ে থাকবে।তিনি বলেন, সামনের দিনে আবার কেউ যদি ফ্যাসিবাদী সরকার কায়েম করতে চায়, তাহলে তাকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে যেকোনো পরিবর্তন আনতে পারে।

সালমান বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরাতে পেরেছি, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে দূর করতে হবে। ফ্যাসিবাদের নিজস্ব সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি রয়েছে। এই ব্যবস্থাকে বিলোপ করার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই আন্দোলনে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসা করা সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

সালমান আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনার সঙ্গে যারা জড়িত থেকে মানুষকে মেরেছে তাদেরও বিচার করতে হবে। শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন দলগুলো ছাত্র রাজনীতিকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এই ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তন করতে হবে। এই সময়ে ছাত্র রাজনীতি পরিবর্তন না হলে, আর কখনও পরিবর্তন হবে না।

তিনি বলেন, শুধু মেধার ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতি করলেই পরিবর্তন আসবে না। কারণ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কর্মজীবনে অনেক ভালো করার পরও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তাই মেধার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চাও করতে হবে।  ঢাকার সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীও জানান তিনি।

মিল্লাদ হোসেন বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ এবং শেখ হাসিনার মতো সরকার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। জুলাই আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতারা সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেমন ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন, তা জানার জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সারাদেশে ৩০টি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি দৃষ্টি রেখে দলীয় কার্যক্রম নির্ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আব্দুর রহমান আফফান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছিল। তারা একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক মনোভাব দূর হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র রাজনীতির যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিটি সংগঠন তার নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজ নিজ আদর্শ অনুযায়ী রাজনীতি করবে। কারো প্রতি দলীয় আদর্শ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের চাওয়া, কল্যাণ, প্রত্যাশা নিয়ে পরিচালিত হয়। আর এ  বিষয়গুলো ঠিক থাকলে ছাত্রদের দৃষ্টি সুর্নির্দিষ্ট থাকে। তিনি আরও বলেন, তা না হলে ছাত্রদের কার্যক্রম সুর্নিদিষ্ট থাকে না। ছাত্ররা ১৯৭১, ’৯০ এবং ২০২৪ সালে পরিবর্তন এনেছে।
দেশকন্ঠ/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।