দেশকণ্ঠ অনলাইন : স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম ‘বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’। এই সংগঠন ঘিরে সাম্প্রতিককালে অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত উদীচী-শুভাকাঙ্ক্ষী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি তারা আশা করেছেন উদীচীর বর্তমান নেতৃত্ব নিজেদের সমস্ত মতপার্থক্য ভুলে আলোচনার মাধ্যমে ‘রুচির আকালে’ নিপতিত বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের হাল শক্ত হাতে ধরবে।
রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেনের প্রতিষ্ঠিত উদীচী যার লালিত বাণী ‘মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেয়া প্রাণ’ সেই উদীচীর কর্মীরা জনসাধারণকে নিরন্তন অনুপ্রাণিত করেছে, কর্মীরা ছুটে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে, মানুষের মননকে মুক্তির আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছে। ফলে উদীচী বাংলার মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা আর সহায়তা পেয়েছে। সক্রিয় ও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে নিষ্ক্রিয় লাখো কর্মীসহ উদীচী সদস্য না হয়েও অসংখ্য হিতৈষী মানুষ চেয়ে থাকে উদীচীর দিকে।
প্রায় ৬২ জন প্রবাসী বাঙালি একি লিখিত বাতায় বলেছেন, দেশের অন্যতম আদর্শিক সংগঠন উদীচী। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠনই নয় এটি দেশের মানুষের ন্যায়বিচার ও মানবিক অধিকার আদায়ে গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে এই সংগঠনটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা ঘাতপ্রতিঘাতকে প্রতিহত করতে প্রবল প্রত্যয়ে পথে নেমেছে। সারাদেশে বিস্তৃত শাখা কার্যক্রমের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে। কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবীদের পাশাপাশি ছাত্রদের সাথে একাট্টা হয়েছে, সামরিক-বেসামরিক স্বৈরশাসক উৎপাটনে, উগ্রধর্মজীবী জঙ্গী সংগঠনের উল্লম্ফন প্রতিহত করতে, ধর্ষণ-নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে, ইতিহাস-ঐতিহ্য-শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনাচারের বিরুদ্ধে উদীচী দিশারি হয়ে শুধুমাত্র সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনকেই নয় পথ দেখিয়েছে রাজনৈতিক আন্দোলনকেও।
মানুষের অধিকার আদায়ের কণ্টকাকীর্ণ পথে উদীচীর বুক থেকে ঝরেছে রক্ত। যশোর, নেত্রকোনায় উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তির বোমার আঘাতে শহীদ হয়েছে অসংখ্য উদীচী সদস্য। কিন্তু স্বৈরশাসকের, জঙ্গী ধর্মব্যবসায়ীদের চোখরাঙানি, বুলেট, বোমা স্তব্ধ করতে পারেনি উদীচীর কর্মকাণ্ড।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিগত কিছুদিন যাবত গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত উদীচীসংক্রান্ত খবরাখবর আমাদের বিচলিত করেছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদীচীকে কেন্দ্র করে কোন দুর্ঘটনা বিভেদ বিসম্বাদ বাংলাদেশের গ্রহণগ্রস্থ সাংস্কৃতিক আকাশে অমানিশা ডেকে আনবে বলে আমরা মনে করি। এমনতর সংবাদে লাখো কর্মীর বুকে যেমন রক্তক্ষরণ হয় তেমনই লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয় ভেঙে যায়। দেশের এই ঘোর অন্ধকারে উদীচীই পারে মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে রাখতে। যে মশাল হাতে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশে উদীচী যাত্রা শুরু করেছিল তা ম্রিয়মাণ হলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হেরে যাবে, কারা জয়ী হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা আশা করি, সকল কালোমেঘ সরিয়ে উত্তর আকাশে জ্বলজ্বল করবে বাংলার প্রগতিশীল সংস্কৃতিমনা মানুষের দিশারী ‘উদীচী’।
‘জয় হোক উদীচীর, জয় হোক বাংলার মানুষের’ এই শিরোনাম ভাবনায় এক বার্তায় স্বাক্ষর করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, রথীন্দ্রনাথ রায়, লায়লা হাসান, বেলাল বেগ, মুহম্মদ ফজলুর রহমান, সুব্রত বিশ্বাস, কাজী ইসলাম, কৌশিক আহমেদ, হুসনে আরা, হাসান মাহমুদ, ক্ল্যারা রোজারীও, আশীষ রায়, মো. আলীম উদ্দীন, মহিতোশ মজুমদার তাপস, সাগর লোহানী, আলপনা গুহ, ফরিদা ইয়াসমিন, মিথুন আহমেদ, আনোয়ার শাহাদাত, তাহমিনা শহীদ, কল্লোল দাশ, সুলেখা পাল, হিরো চৌধুরী, এজাজ আহমেদ, হোসেন শাহরিয়ার তৈমুর, ওবায়দুল্লাহ মামুন, মজিব বিন হক, কাশেম আলী, মোজাম্মেল লস্কর, মোকলেস মোনতাসির, সৈয়দ রেজাউল করিম, এবাদুল হক চৌধুরী, আবু মনসুর, মুহিবুল হক রুকন, আবদুল কুদ্দুস মাখন, গোলাম মর্তুজা, শরাফ সরকার, জেবু চৌধুরী, রতন কর্মকার, আব্দুল বারী, টিংকু দাস, মহিউদ্দিন মাসুম, নাসিম আহমেদ, শাহাব আহমেদ, প্রতাপ দাস, সৈয়দ জাকির আহমেদ রনী,কাজী আতীক, বাশিরুল হক, জুলফিকার হোসেন বকুল, আব্দুল হাফিজ চৌধুরী ইমু, সৌদ চৌধুরী, শীলা মোস্তাফা, রওশন আরা নীপা, নজরুল কবীর, সৈয়দ মুজিবুর রহমান ও কাজী টুলু।