কালীগঞ্জ, (গাজীপুর) প্রতিনিধি : ‘মোরা এক ঘাটেতে রান্ধি বাড়ি, আরেক ঘাটে খাই, মোদের ঘরবাড়ি নাই।’ রকম অনেক কালজয়ী গান বেদে ও সাপুড়েদের নিয়ে রচিত হলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বেদেদের সাপ ধরা, সাপ নাচানো, বীণের সুরে সাপের খেলা দেখানো, সিঙ্গা লাগানো, তাবিজ বিক্রি এবং দাঁতের পোকা ফেলা এই সকল দৃশ্য আর নেই বললেই চলে।
জীবিকার তাগিদে নদীতে সারি সারি নৌকায় পাল তুলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভেসে বেড়ানো বেদেদের জীবনে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। অবহেলিত এই জনগোষ্ঠী নিজ প্রচেষ্টায় গাইতে শুরু করেছে জীবনের জয়গান। তাদের কিছু অংশ বংশ পরস্পরায় প্রাচীন এ পেশায় জীবন যাপন করলেও বেশীরভাগ অংশ খুঁজে নিয়েছে জীবন ধারণের নতুন অবলম্বন।
নৃবিজ্ঞানীদের মতে-বাংলাদেশে বেদেদের আগমন আরাকান অর্থাৎ বর্তমান মায়ানমার থেকে। ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সঙ্গে শরণার্থী হিসেবে তারা এদেশে এসেছিল। পরবর্তীতে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং সমগ্র উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বেদে সম্প্রদায় বাংলাদেশে কয়েক’শ বছর ধরে আছে এবং এদেশের সমাজ-সংস্কৃতিতে মিশে গেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানাযায়, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বালু নদীর তীর ঘেঁষে কাকালিয়া গ্রামের 'বেদে পল্লী' বা 'বাইদ্যাদের' বসবাস। এখানে বেদেরা বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি লীজ নিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা শুরু করেছে। অনেকে আবার জায়গা জমি কিনেও পরিবার নিয়ে স্থায়ী বসত গড়ে তুলেছে। এ অঞ্চলে ৭০ টি বেদে পরিবারে প্রায় ৪ শত জনের বসবাস। জীবনের তাগিদে নিজেদের জাত পেশা থেকে সরে এসে জীবন ধারণের নতুন অবলম্বন খুঁজে নিচ্ছেন তারা। অনেকেই বিকল্প পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন স্থানীয় বাজারে দোকান করা, হাঁস-মুরগী ও কবুতর পালন, কাঁথা সেলাই,গার্মেন্টস সহ বেসরকারী চাকরির মতো অন্যান্য পেশা।
কালীগঞ্জের বাইদ্যাপাড়ার ১২/১৩ বছর বয়সী মেয়ে তিন্নি আক্তার কিছু দিন আগেও যেখানে বাবা মায়ের সাথে বিষধর সাপ নিয়ে বিভিন্ন হাট বাজারে খেলা দেখাতো, সে এখন পিপুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। বেদে সরদার আব্বাছ মিয়া ও আঃ রউফ জানান, নারীরাও নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য হাতে তুলে নিয়েছেন সেলাই মেশিন এবং বিউটি পার্লারের মত ব্যবসা। বেদে যুবকরা তাদের অলস সময় কাটানোর পরিবর্তে টেইলার্সের দোকান খুলে সৃষ্টি করেছেন আত্মকর্মসংস্থান। বন্ধ হয়েছে বাল্য বিবাহ। জীবনমান বদলে যাওয়া এ পল্লীর ঘরে ঘরে এখন কর্মঠ মানুষ। বেদে পরিবারের অনেক সন্তানই এখন স্কুল, কলেজ ও বিশ্বিবিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। সরকার তাদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য চালু করেছে বিভিন্ন কার্যক্রম।
দেশকণ্ঠ/আসো