দেশকণ্ঠ কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : সংকটকালে খাদ্যঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর আমন মৌসুমে আভ্যন্তরীণভাবে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করে। গাজীপুরের কালীগঞ্জে চলতি মৌসুমে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫৩ মেট্রিক টন ও চাল ৩৮মেট্রিক টন। নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে ধান সংগ্রহের সময়সীমা চলতি বছরের ৭ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আশানুরুপ আমন উৎপাদন হলেও বছর শেষে সরকারি ভাবে ধান ও চাল সংগ্রহের পরিমাণ ছিল শুণ্য। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় আমন ধানের ক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ২৮ টাকাএবং চাল ৪২ টাকা কেজি দরে কেনার বিষয়টি নির্ধারণ করে গত ১৭ নভেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও একমুঠো ধান-চাল ক্রয় করতে পারেনি কালীগঞ্জ উপজেলা সরকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামের মাধ্যমে ১৫৩ মেট্রিক টন আমন ধান এবং ৩৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সরকারি হিসেবে চলতি মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলায় আমন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিলো ১২ হাজার ৪শত ৯৩ মেট্রিক টন। লক্ষ্য মাত্রার বিপরীতে উপজেলা ব্যাপী এ মৌসুমে আমন ধান উৎপাদন হয় ১২ হাজার ২শত ৭৫ মেট্রিক টন। আশানুরুপ আমন ধান উৎপাদন হলেও কৃষক ধান সরবরাহ করতে না আসায় চলতি মৌসুমে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ ছিল শূণ্য। পরবর্তীতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখা আমন সংগ্রহ ২০২২-২০২৩ শতভাগ সফল করার লক্ষ্যে সময়সীমা গত ৭ মার্চ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করে। কিন্তু সময় বৃদ্ধি করা হলেও কালীগঞ্জে আমন ধান-চাল সংগ্রহ ছিল সেই শুণ্যের কোঠায়ই।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, বর্তমানে বাজারে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত শুকনো ধান বিক্রি হচ্ছে। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করে মণ প্রতি ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা কম পাওয়া যায়। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করতে গেলে দাম কম পাওয়া ছাড়াও টাকা পেতে দেরি হয়। পরিবহন খরচ বেশি হয় এবং ভোগান্তিও পোহাতে হয়। এসব কারণেই সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে কৃষকদের আগ্রহ নেই। আফসানা রাইচ মিলের মালিক হাবিবুল্লাহ মোড়ল বলেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। সরকার মণ প্রতি চালের দাম নির্ধারণ করে ১ হাজার ৬শত ৮০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আমন চালের দাম মণ প্রতি ২দুই হাজার ২শত ৪০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে চালের উৎপাদন খরচ ওবাজার মূল্য বেশি হওয়ায় লোকসানের ভয়ে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে আগ্রহী হয়নি। কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধান সংগ্রহের নির্ধারিত সময়ে উপজেলা ব্যাপী মাইকিং করেও কোন কৃষক ধান সরবরাহ করতে না সংগ্রহ করা যায়নি। সরকারি ভাবে শুকনো চিটামুক্ত প্রতি মণ ধান ১হাজার ১শত ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ধানের বাজারে ১ হাজার ২৫০থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত শুকনো ধান বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা কাঁচা ধানই ক্ষেতে প্রতি মণ ১ হাজার ১শত ৫০ টাকায় বিক্রি করে দেন। কাঁচা ধান বিক্রিতে লাভ বেশী হওয়ায় কৃষকরা আমাদের কাছে কোন ধান সরবরাহ করেননি। তবে ধানের সরকারি মূল্য নির্ধারণের কারণে বাজারে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম জানান, উপজেলার ২ হাজার ৮০০শত হেক্টরজমিতে রোপা আমন এবং ৫০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান চাষ করা হয়। এ মৌসুমে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৪শত ৯৩ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ১২হাজার ২শত ৭৫ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি।
দেশকণ্ঠ/আসো