• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ২০:৩৩    ঢাকা সময়: ০৬:৩৩
বিবিসির বিশ্লেষণ

চীনমুখী আফ্রিকাকে কাছে টানতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র

  • মতামত       
  • ২৭ মার্চ, ২০২৩       
  • ৬৫
  •       
  • ০০:২২:০৮

বিশেষ প্রতিবেদন : প্রথমে আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এখন আফ্রিকা সফরে আছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বছরের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফ্রিকা সফরে যেতে পারেন। মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একের পর এক আফ্রিকা সফর একটি বার্তা দিচ্ছে। আর তা হলো, আফ্রিকা উপমহাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।
 
অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তি, বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে যুক্তরাষ্ট্র তৎপর। ৯ দিনের আফ্রিকা সফরের অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ রোববার ঘানায় পৌঁছান কমলা। সেখানে তাঁকে নেচেগেয়ে স্বাগত জানানো হয়। এরপর তাঁর তানজানিয়া ও জাম্বিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে। কমলার এ সফরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-আফ্রিকা সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় এ সফর হচ্ছে। সম্মেলনে বাইডেন বলেছিলেন, আফ্রিকার ভবিষ্যতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু করতে প্রস্তুত। তবে এটি সেই ভবিষ্যৎ, যা একটি তরুণ ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পাশাপাশি মহাদেশটির বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ দ্বারা সমৃদ্ধ। উপমহাদেশটির এ বৈশিষ্ট্য প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য অনেক শক্তিশালী দেশকে আকৃষ্ট করেছে।
 
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সাম্প্রতিক ইথিওপিয়া ও নাইজার সফরে আফ্রিকার দেশ দুটির নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা আফ্রিকার এমন দেশগুলোতে যাচ্ছেন, যেগুলো মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি। ঘানার অর্থনীতি একসময় সমৃদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন দেশটির অর্থনীতি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটি ঋণ পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য বেইজিং গেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী কেন ওফোরি-আত্তা। বেইজিং সফর নিয়ে তিনি টুইটারে লিখেছেন, এখন পর্যন্ত চীনের সঙ্গে ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে।
 
বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে আর্থিক সহায়তা দরকার ঘানার। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা তাঁর সফরে ঘানাকে কোনো ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে ঘানার অর্থমন্ত্রীর চীন সফরের জেরে এ ব্যাপারে একটা চাপে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনীতিবিদ ও ঘানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্সের অধ্যাপক গডফ্রেড আলুফার বোকপিন মনে করেন না, কমলার সফর দেশটির (ঘানা) অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবে তাৎক্ষণিক কোনো সুবিধা দেবে। তবে গডফ্রেড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘানার সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কমলার সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘানার ব্যাপারে, ঘানার ঋণ সংকটের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র যে আগ্রহ দেখাচ্ছে, তা তাঁর দেশের জন্য ভালো। কিন্তু ঋণদাতা দেশগুলোর প্রতিকূল শর্তের বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
 
জাম্বিয়ার অবস্থাও ঘানার মতো। করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে খেলাপির খাতায় নাম ওঠে তামাসমৃদ্ধ দেশটির। ঋণ পুনর্গঠনে চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে জাম্বিয়া। একই সঙ্গে আইএমএফের কাছেও আর্থিক সহায়তা চেয়েছে দেশটি। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘানা ও জাম্বিয়ার ঋণ–সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সর্বোত্তম পন্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন কমলা। জাম্বিয়ার বিশ্লেষক সিশুওয়া সিশুওয়া মনে করেন, আফ্রিকার দেশগুলোর ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব বেশি। তবে আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য আরও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাকি বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আফ্রিকার পছন্দের স্বাধীনতা থাকা উচিত বলে মহাদেশটিতে একধরনের ক্রমবর্ধমান মনোভাব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষক সিশুওয়া বলেন, বন্ধু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে চীন ও রাশিয়ার মতোই দেখে থাকে জাম্বিয়া।
 
জাম্বিয়ার এই বিশ্লেষক আরও বলেন, যখন একটি দেশ সহায়তার জন্য চীন বা রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয়, তখন বিষয়টিকে কাউকে অবজ্ঞা হিসেবে দেখা উচিত নয়। আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে কারও একচেটিয়া সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিতে বিপরীত হতে পারে। আর তা টেকসই না–ও হতে পারে। গত বছর ওয়াশিংটন সফরকালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার করা একটি মন্তব্যের সঙ্গে সিশুওয়ারের এ বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। তখন রামাফোসা বলেছিলেন, ‘আমরা কার সঙ্গে যাব, তা কারও আমাদের বলে দেওয়া উচিত নয়।’
 
একাধিক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, আফ্রিকার দেশগুলো কাকে বন্ধু হিসেবে নেবে, সে বিষয়টি ঠিক করে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তবে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসনের ওপর জোর দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। আর যুক্তরাষ্ট্রের এসব মূল্যবোধ চীন ও রাশিয়ার চেয়ে আলাদা। বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে চীন। এই নীতির কারণে ফলে কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলাটা মসৃণ হয়।
 
আফ্রিকার দেশগুলোতে রাশিয়ার উপস্থিতি রয়েছে—এমন দুটি আফ্রিকান দেশ বুরকিনা ফাসো ও মালিতে সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় দেশ দুটির সঙ্গে পশ্চিমাদের, বিশেষ করে ফ্রান্সের সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার দেশ দুটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে আসছিল সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স।
 
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে নিঃসন্দেহে আফ্রিকার আরও দেশের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টিকে জরুরি মনে করছে পশ্চিমারা। যুদ্ধের নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে আফ্রিকার দেশগুলোকে বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভোটদানে বিরত থাকা দেশগুলোর অর্ধেকই ছিল এ মহাদেশের। এসব দেশের মধ্যে তানজানিয়াও ছিল, যেখানে এখন সফরে যাচ্ছেন কমলা। আফ্রিকা সফরে যাওয়া বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কমলা। গত ডিসেম্বরের যুক্তরাষ্ট্র-আফ্রিকা সম্মেলনের পর তিনি পঞ্চম মার্কিন কর্মকর্তা, যিনি এই মহাদেশ সফর করছেন। বাকি চার মার্কিন কর্মকর্তা হলেন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন, জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড, ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন।
 
কিন্তু আফ্রিকা নিয়ে শক্তিধর দেশগুলোর নতুন এ আগ্রহের প্রেক্ষাপটে মহাদেশটির সঙ্গে ন্যায্য আচরণের দাবিও উঠেছে। অধ্যাপক গডফ্রেড বলেন, আফ্রিকার ব্যাপারে শক্তিধর দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান আগ্রহ নিয়ে মহাদেশটিতে একটি সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। উনিশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপীয় দেশগুলোর উপনিবেশ স্থাপন ও শোষণের প্রসঙ্গ টেনে ঘানার এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আফ্রিকায় প্রভাববল সৃষ্টির নতুন তোড়জোড় শুরুর বিষয়ে মহাদেশটিতে একটি ধারণার জন্ম হয়েছে। তবে এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর জোর দেওয়া দরকার।
সূত্র : বিবিসি
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।