দেশকন্ঠ অনলাইন : জীবনভর মা-ই আমাদের খেয়াল রেখে যান, তার খেয়াল রাখার সময় আমাদের হয় কি? আমাদের জীবনে আমরা মোট যতটুকু যত্ন আর ভালোবাসা পাই, তার অধিকাংশই পাই আমাদের মায়ের কাছ থেকে। নিজের ভেতরে একটু একটু করে বড় করা, এরপর পৃথিবীর আলো দেখানো আর পৃথিবীর এবড়োথেবড়ো পথে চলতে শেখানো। মা পাশে না থাকলে তা কী করে সম্ভব! তাই তো সবচেয়েও হতভাগা সে-ই, যার মা নেই।
খুব ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন এমন কারও সঙ্গে কথা বললেই আপনি বুঝতে পারবেন, পুরো জীবনটা তার কতটা কষ্টে কেটেছে। একজন মাকে হারানোর ক্ষতি এক পৃথিবীর সমান। কোনোকিছুতেই সেই ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। শুধু ছোটবেলায়ই নয়, বড়বেলায় এসেও মাকে হারালে এলোমেলো হয়ে যায় অনেকের পৃথিবী। তাই যাদের মা বেঁচে আছেন তারা নিজেকে অনেক বেশিই সৌভাগ্যবান ভাবতে পারেন। মায়ের চেয়ে বড় সম্পদও যে আর নেই পৃথিবীতে!
আমাদের ব্যস্ত জীবনে হাজারো অগুরুত্বপূর্ণ জিনিসও অনেক সময় জায়গা করে নেয়। কিন্তু দূরে থাকা মাকে নিয়ে ভাবার মতো সময় অনেকেরই থাকে না। শুনতে রূঢ় শোনালেও বর্তমানে এটি অনেকটাই সত্যি। তাই বলে বলছি না যে মায়ের কথা কোনো সন্তানই ভাবে না। বরং মাকে ভালোবাসার গল্প কিংবা উদাহরণও রয়েছে ভুড়ি ভুড়ি। কিন্তু তেমন হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হলো মায়ের সঙ্গে কঠোর আচরণ, নিয়মিত তার খোঁজ না নেয়া, তার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করা। আমরা একটু সচেতন হলেই এই ভুল থেকে দূরে থাকতে পারি।
মা দিবস তো কেবল একটি দিন। বছরে মাত্র একটি দিন ফুল, চিঠি, চকোলেট কিংবা কেক পাঠিয়ে মাকে শুভকামনা জানানোর মতো কঠিন বাস্তবতা আমাদের জীবনে এখনও আসেনি। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই চাইলে মাকে নিয়ে যখন-তখন ঘুরে আসতে পারি তার পছন্দের জায়গা থেকে, মাকে রেঁধে খাওয়াতে পারি, মায়ের যত্ন নিতে পারি, তাই না? কিন্তু মায়েরও যে যত্ন নেয়া প্রয়োজন, সেই খেয়াল ক’জনে রাখেন? মায়েরও হতে পারে মন খারাপ। তার মন ভালো করার কথা কেউ কি আমরা ভাবি?
খোঁজ নিলে দেখা যাবে, আমাদের বেশিরভাগের মা-ই জীবনে কখনো সমুদ্র দেখতে যাননি। আমাদের আলোকিত করতে গিয়ে নিজের জীবনের অনেক শখ আর আহলাদ একে একে বিসর্জন দিয়ে এসেছেন। যদিও প্রতিদানের প্রত্যাশা তাদের থাকে না, আমাদের ভালো থাকাটাই কেবল তাদের স্বপ্ন। তবু কিছু ভালোবাসা কি আমরা শোধ করার চেষ্টা করতে পারি না? জীবন বড় স্বল্প সময়। মাকে ভালোবাসার মতো অমিয় সুযোগ আমরা কি হেলায়ই না হারিয়ে ফেলি! তারপর একদিন হারিয়ে ফেলি আমাদের মাকে। হারিয়ে যায় পৃথিবীতে আমাদের ভালোবাসার সবচেয়ে বড় ভাণ্ডারও। তাই হারিয়ে ফেলার আগেই যেন আমরা বুঝতে পারে, আমাদের জীবনজুড়ে মায়ের কতটা মূল্য!
দেশকন্ঠ//