• মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ১২:১১    ঢাকা সময়: ২২:১১

বাইডেন ট্রাম্প ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য

  • মতামত       
  • ০৬ আগস্ট, ২০২৪       
  • ৮৫
  •       
  • A PHP Error was encountered

    Severity: Notice

    Message: Undefined offset: 1

    Filename: public/news_details.php

    Line Number: 60

    Backtrace:

    File: /home/teamdjango/public_html/deshkontho.com/application/views/public/news_details.php
    Line: 60
    Function: _error_handler

    File: /home/teamdjango/public_html/deshkontho.com/application/controllers/Public_view.php
    Line: 72
    Function: view

    File: /home/teamdjango/public_html/deshkontho.com/index.php
    Line: 315
    Function: require_once

সেলিম খান, দেশকন্ঠ অনলাইন : বয়স বাড়লে মানুষ যে প্রজ্ঞার অধিকারী হয় তা আরও একবার প্রমাণ হলো। প্রমাণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অনেক গোঁয়ার্তুমির পর আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এবং একই সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়ে। তাঁর এই দুটি সিদ্ধান্ত যেন ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে।

বেশ কিছু দিন আগে আমেরিকার সাংবাদিক বন্ধুরা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমাকে বলেছিলেন, বাইডেনকে সরে যেতেই হবে। কারণ ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষ থেকে তাঁর ওপর চাপ বাড়ছে। এত চাপ এই বৃদ্ধের পক্ষে নেওয়া সম্ভব না। তবে বাইডেনের প্রার্থী থাকার খায়েশে শেষ পেরেকটি ঠোকেন বারাক ওবামা। কারও কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা কঠিন সত্য যে, বারাক ওবামা এখনো ডেমোক্রেটিক পার্টিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তাঁর কথায় দলের অনেক কিছুই ঠিক হয়। প্রায় আট বছর আগে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে গেলেও এই কৃষ্ণকায় মানুষটির জনপ্রিয়তা এখনো অটুট। কৃষ্ণকায় শব্দটির মধ্যে অনেকে বর্ণবাদী গন্ধ পেতে পারেন, এতে দোষের কিছু নেই। তবে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এটা বোঝানোর জন্য যে, ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ-প্রভুত্বের ধ্বজা ওড়ানো আমেরিকার পাশাপাশি আরও একটি উন্নত আমেরিকা যে আছে, তা।

 আমেরিকার সাংবাদিক বন্ধুদের বক্তব্য ছিল, ৮১ বছরের এক অশক্ত নেতার পেছনে থেকে ডেমোক্র্যাটরা বুঝে গেছেন, ২০২৪-এ তাঁদের কোনো সুযোগ নেই। ট্রাম্প আসছেনই। আর ফিলাডেলফিয়ার গুলির ঘটনার পর সে সম্ভাবনা আরও বেগবান হয়েছে। ফলে তাঁরা চাইছেন, কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন এবং তাঁর সাথে একজন উপযুক্ত রানিং মেট দিয়ে এ যাত্রা কোনোমতে পার করা। তাঁদের লক্ষ্য ২০২৮। আর ওই সময় ট্রাম্প থাকবেন না। ফলে হারের ধাক্কাটা কমলার ওপর দিয়ে পার করে দিয়ে তাঁর রানিং মেট বা অন্য কোনো তরুণ নেতাকে ২০২৮-এর নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা।

এই বক্তব্যে বাইডেনকে সরানোর বিষয়টি বিশ্বাস হলেও কমলাকে প্রার্থী করাটা কষ্ট-কল্পনা বলেই মনে হয়েছিল। তারপরও ভেবেছিলাম, বলির পাঁঠা তো কাউকে না কাউকে হতেই হয়। আর শব্দটি যখন ভারতীয় ভাষার সাথে যুতসই, তখন ভারতের সাথে সামান্যতম সম্পর্ক আছে এমন কারোর ওপর প্রয়োগ করাটাই দস্তুর বলে মনে করছেন ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ নেতারা। হতেই পারে। কয়েক দিন আগে দেখলাম এই আখ্যান পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। বাইডেন নিজে কমলার নাম প্রস্তাব করছেন শিখণ্ডী হিসেবে। রাজনীতির নির্মমতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তা ওপরের কাহিনি থেকে পরিষ্কার।

বাস্তবতা হলো, কাহিনি এখানে শেষ হলে তা একেবারে পানসে হয়ে যেত। কিন্তু সেটা হতে দেননি কমলা। বাইডেনের ঘোষণার পর এক অদ্ভুত ম্যাজিক দেখল সবাই। যে কমলা হ্যারিসকে এত দিন কেউ গোনার মধ্যে ধরেনি, সেই তিনি কিনা ভগ্নপ্রায় দলে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করলেন। বিমর্ষ, হতোদ্যম ডেমোক্রেটিক দলটাকে এক লহমায় চাঙা করে তুললেন। দলের সদস্যরা আশাবাদী হয়ে উঠল। বুঝুন অবস্থাটা। বাইডেনের মতো একজন ঝানু রাজনীতিক দলটাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন, আর এক কৃষ্ণকায় ও অভিবাসী নারী রাজনীতিক ডুবতে বসা দলটাকে কোথায় টেনে তুললেন।

কথায় কথায় মার্কিন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি করা হয়, তা কতটা যুক্তিহীন, অসার–কমলা হ্যারিসের এই উত্থান তার প্রমাণ। এখন তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার মতো নেতাই ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে এর অর্থ এই না যে, ওই দলে আর কোনো যোগ্য নেতা নেই। বরং এত অল্প সময়ে (৩ মাস) ট্রাম্পের মতো প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে একেবারে আনকোরা মুখ নিয়ে আসাটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কমলাই ডেমোক্রেটিক পার্টির সর্বোত্তম প্রার্থী। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে আগস্টের দলীয় সম্মেলনে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে চলেছেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত।

আমেরিকার প্রেক্ষাপটে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এক. প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিলম্বিত বোধদয়। তিনি ৮১-তে পৌঁছেও মানতে পারছিলেন না–রাজনীতিতে তাঁর থাকার দিন শেষ। এমনকি প্রথম বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পরও। ক্ষমতার রাজনীতি মানুষকে কতটা চিন্তাহীন করে তোলে তার বড় প্রমাণ বাইডেনের দীর্ঘ একগুঁয়েমি।

দুই. ট্রাম্পের অজানা বিপদ। এতদিন এক বৃদ্ধ রাজনীতিককে রীতিমতো অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করে তিনি নিজের জায়গা অনেকটাই পোক্ত করে ফেলেছিলেন। আর ৭৮ বছর বয়সে গুলির মুখ থেকে বেঁচে আসার পরে তিনি প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান। কিন্তু দৃশ্যপট থেকে বাইডেনের এই আচমকা বিদায় তাঁর জন্য এক বড় ধাক্কা। এতদিন বাইডেনকে ঘিরে তিনি যে প্রচার চালিয়ে এসেছেন, তার পুরোটাই পানিতে গেছে। মঞ্চে এখন একেবারে নতুন এক প্রতিদ্বন্দ্বী, যাকে তিনি কখনো আমলে নেননি। আর এই মুহূর্তে তো ডেমোক্র্যাটদের আনুষ্ঠানিক ঘোষিত কোনো প্রার্থীই নেই। তাহলে তিনি কথা বলবেন কাকে নিয়ে? কমলাকে নিয়ে? কমলা যদি চূড়ান্ত মনোনয়ন না পান, তাহলে সে প্রচারও তো পানিতে যাবে। বিদায়ের আগে কী এক মুশকিলে ট্রাম্প সাহেবকে ফেলে গেলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কোনো মানে হয়! এর ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে জনপ্রিয়তার সূচক, যা কিনা সবসময় ট্রাম্পের পক্ষেই থেকেছে। মঞ্চের নট-নটী পরিবর্তনের সাথে সাথে রয়টার্স ও সিএনএন-এর পৃথক দুটি জরিপ জানাচ্ছে, কমলা জনপ্রিয়তার নিরিখে ট্রাম্পের চেয়ে দুই পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। বরং ট্রাম্প ২০ পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও কেউই বিস্মিত হতেন না।

আইনশাস্ত্রে পড়াশোনার পর স্বাভাবিকভাবে কমলা একজন আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। কিন্তু এর পরে তাঁর উত্থান বিস্ময়কর। ২০০৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, ২০১০-এ ক্যালিফোর্নিয়া মতো বড় অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল, ২০১৬ সালে সিনেটর, ২০২০-এ ভাইস প্রেসিডেন্ট–দুই অভিবাসীর সন্তান হিসেবে তিনি সবকিছুতেই প্রথম। হয়তো প্রেসিডেন্ট হিসেবেও। বাবা জ্যামাইকা ও মা ভারত থেকে যাওয়া অভিবাসী। ফলে আফ্রিকান-আমেরিকান পরিচয়ের পাশাপাশি ভারতীয়ত্বের ছাপ লেপ্টে আছে তাঁর গায়ে। আমেরিকার ক্ষমতাধারী পুরুষেরা (বিচারপতি থেকে রাজনীতিক সবাই) যখন গর্ভপাত, অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশটাকে মধ্যযুগে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তখনই কমলা ছিলেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতিমূর্তি। তাঁর উদারমনা মনোভাব, সোজাসাপটা কথাবার্তা–তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

তারপরও কমলা হ্যারিস দলের মনোনয়ন পাবেন কিনা, পেলেও জিতবেন কিনা–সেসব অনেক দূরের প্রশ্ন। কিন্তু গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচনের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য আছে, সেটাই এখানে ফুটে উঠেছে। এই সৌন্দর্যের স্বাদ বিশ্বের গণতন্ত্রপ্রেমীরা পেয়েছে ভারতে শক্তিশালী বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশের মধ্যে; যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দক্ষিণপন্থীদের ভরাডুবির মধ্যে; একইভাবে বাইডেনের সরে দাঁড়ানো ও ট্রাম্পকে নড়বড়ে করার মধ্য দিয়ে। সব ঘটনার শিক্ষা একটাই, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ খুব একটা ভুল করে না। ভুল করলেও শুধরে নেয়। তাই তাদের ওপর আস্থা রাখাটাই শ্রেয়।

সেলিম খান: নির্বাহী সম্পাদক, ডিজিটাল মিডিয়া, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
দেশকন্ঠ //

  মন্তব্য করুন
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।