• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০৫:৩৯    ঢাকা সময়: ১৫:৩৯

বর্গীরা আর দেয় না হানা নেই কো জমিদার তবু…

  • মতামত       
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২৪       
  • ১৫
  •       
  • ১৪:৫০:৩৯

ড. সৈয়দ ইজাজ আহসান, দেশকন্ঠ অনলাইন : বর্গীরা আর দেয় না হানা, নেই কো জমিদার তবু কেন এ দেশ জুড়ে নিত্য হাহাকার–ভূপেন হাজারিকার সেই গানের কলি মনে পড়ল আমাদের দেশের প্রসঙ্গে। দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর অন্যতম ঘন বসতি পূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম।  দেশগুলো শুধু জনবহুল নয়, এদের জনগণের সমস্যার যেন কোনো শেষ নেই। ভুটান আর মালদ্বীপ বাদে অন্যদের বাসস্থান, চিকিৎসা, বেকারত্ব আর সর্বগ্রাসী দুর্নীতি– আষ্টেপৃষ্টে বেধে রেখেছে। এই দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ সীমাহীন দারিদ্রতায় নিষ্পেষিত হচ্ছে যুগের পর যুগ। এর যেন কোনো শেষ নেই।

তাহলে প্রশ্ন হলো, এরা কি বিদ্রোহ করতে পারে না বা জানে না। অবশ্যই পারে, অবশ্যই জানে। এর জ্বলন্ত প্রমাণ হলো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুথান। পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন ওরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। অকাতরে প্রাণ দেয়। ওরা জীবন দিয়ে যুদ্ধ করে নতুন আশায়। মনে করে, এবারই বোধ হয় কষ্টের শেষ। এবার নতুন জীবন পাবে। কিন্তু না। সেই ভুতের গল্পের মতো যার কাছেই যায়, যাকেই আঁকড়ে ধরতে চায় আসলে তখন সেই ভুতটা যে ভিন্ন রূপ ধরে তার সাথে তামাসা করতে থাকে।

আমাদের স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী ইতিমধ্যে পার হয়েছে। কিছু দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন যে হয়নি তা কি বলা যায়। কিন্তু তাতে কি সাধারণ মানুষের তেমন কিছু হয়েছে? সাধারণ মানুষ কি নিরাপদে-শান্তিতে পরিবার পরিজন নিয়ে দু-মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারছে? যদি পেরে থাকে, তবে ভুমধ্যসাগরের পানিতে কেন তাদের ডুবে মরতে হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী কেন বছরের পর বছর চাকরি খুঁজে হতাশ হয়ে দেশান্তরী হচ্ছে? আর যারা স্বল্প শিক্ষিত, বিদেশে আসছে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ করে তাদের অবস্থা আর নাই-বা বললাম।

আমরা বিদেশে থাকি, আমরা জানি। ঘর থেকে বের হলে পরিবার-পরিজন চিন্তায় থাকে নিরাপদে ফেরার অপেক্ষায়। আমদের দেশে মানুষ মসজিদের বাইরে পুরান জুতা খুলে রেখে গেলে আর পায় না, আর এই সব দেশে সবচেয়ে দামি মডেলের বিএমডব্লিউ গাড়ি নির্বিঘ্নে রাস্তায় পার্ক করে ঘরে ঘুমাতে পারে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য এই অভাবী মানুষ গুলোকে দিশাহারা করে দিয়েছে। আমরা সবাই এই দেশের মানুষ। আমরা সব কিছু জানি। কিন্তু কেন এমন হলো? অন্যান্য দেশে ঘুরতে বা কাজের জন্য গেলে পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়–আমাদের উন্নয়ন আর ওদের উন্নয়নের মধ্যে। অথচ ওদের উন্নয়ন চেয়ে আমাদের উন্নয়ন আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কেননা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ, কৃষি শিল্প, পর্যটনসহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কিন্তু তারপরও কেন আমরা হতভাগ্য দরিদ্র মিসকিন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হচ্ছি?

এর প্রথম ও প্রধান কারণ রাজনৈতিক। স্বাধীনতার পর সব মানুষের আশা ছিল, মুক্ত স্বাধীন দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই গণতন্ত্র যার জন্য লক্ষ জীবন ঝরে গেল। কিন্তু না  আবার এই একনায়কতন্ত্র। জন্মলগ্ন থেকেই দেশ একটা অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে চলা শুরু করল। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নব্বইয়ের দশকে আবার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে দেশ। ২০০৭-এ এসে আবার গণতন্ত্র হোঁচট খায়। ২০০৯-এ শুরু হয় একনায়কতন্ত্র, বংশতন্ত্র এবং সব শেষে দানবীয় স্বৈরতন্ত্র। গুমখুন আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় দেশ। শেষ পরিণতি সবাই দেখেছি, তাই আর বলার কিছু নেই।

এই গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার প্রক্রিয়ায় একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে পার্শ্বদেশ। করেছে বললে ভুল হবে, আবির্ভূত হয়েছে নব্য বর্গীর বেশে। তাদের স্বার্থ আছে এখানে, সন্দেহ নেই বিশেষ করে অর্থনৈতিক আর সেভেন সিস্টার্স বলে খ্যাত তার সাতটি রাজ্যে যোগাযোগ আর নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের লক্ষ্য ছিল একটা বিশ্বস্ত তাঁবেদার অনুগত রাজনৈতিক দল, যাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে দেশটি। এখানে আরও একটা বিষয় আছে তা হলো, এ দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর স্বার্থ, যাদের সংখ্যালঘু বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব অলিখিত বা অবাঞ্ছিতভাবে ভারত তার কাঁধে তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশ বা পাকিস্তান ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদ হয়তো করে কিন্তু এভাবে হস্তক্ষেপ করতে যায় না। অতীতে ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকলেও ২০১৪ থেকে কোনো কিছুর  তোয়াক্কা না করে দেশটি খোলাখুলিভাবে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। কারণ দেশটির জন্য আওয়ামী লীগের চেয়ে বিশ্বস্ত আর কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। আর হবেও না। তাতে দেশটির সাময়িক লাভ হলেও বিরোধী মনোভাব জনগণের মাঝে এখন তুঙ্গে। বিএনপির মতো দলগুলো যারা এতদিন ইনিয়ে বিনিয়ে খুব সাবধানে দেশটির সমালোচনা করত তারা এখন সরাসরি সমালোচনা করছে। অথচ নির্বাচনের সময় তারা দেশটির দ্বারস্থ হয়েছিল আনুকূল্য পাওয়ার আশায়। ব্যতিক্রম ছিল শুধু জামায়াতে ইসলামি ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলো। দেশটির হিদুত্ববাদী সরকারের ভুল ও উগ্র কূটনৈতিক অবস্থানের কারণে তারা আম-ছালা দুটোই সম্ভবত হারিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তার শেষ খুঁটি ছিল তাও হারিয়ে গেল।

এই অঞ্চলের সহযোগিতার সবচেয়ে ভালো এবং বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল সার্ক গঠনের মাধ্যমে। কিন্তু দেশটির অসহযোগিতায় তা ভেস্তে যায়। সহযোগিতার চেয়ে খবরদারির প্রচেষ্টা বেশি হলে এই ধরনের সংগঠন টিকে থাকতে পারে না। অথচ এই সংস্থাকে বিকশিত হতে দিলে দেশটিই বেশি উপকৃত হতো। এক্ষেত্রে চীনের কূটনীতি অনেক বেশি সফল। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় প্রতিটা দেশের সাথে চীনের সম্পর্ক বেশ ভালো। যদিও চীনের ঋণের ফাঁদ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের মূলে চীনা উন্নয়ন ঋণের ভূমিকা ছিল। কিন্তু চীন এই দেশগুলোর রাজনৈতিক ব্যাপারে ভারতের মতো নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেনি। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই তার আনাগোনা সীমাবদ্ধ থেকেছে। তার ফলে দেশটির চেয়ে চীনের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি, যেটি কিনা আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের মাথা ব্যথার কারণ।

এবার মূল কথায় আসা। গণতন্ত্র যেকোনো দেশের মানুষের পরম আরাধ্য। এই গণতন্ত্রের হাত ধরেই আসে উন্নয়ন। গণতন্ত্রবিহীন ছিঁটেফোঁটা উন্নয়ন যদি হয়েও থাকে তবে তা কোনোভাবেই টেকসই হয়নি আর হবেও না কোনো দিন। লক্ষ্য একটাই, দেশকে নব্য বর্গিদের থাবা থেকে বাঁচিয়ে দুর্নীতি আর শোষণের যাঁতাকল থেকে বেরিয়ে একটা সুন্দর উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ভুলে যেতে হবে ভেদাভেদ। দেশ কারও একার বা কোনো গোষ্ঠীর না। কিন্তু আমরা কি পারব বর্গি আর জমিদারদের থাবা থেকে বেরিয়ে আসতে? কেন পারব না? যে সাহস আর আত্মত্যাগের নমুনা শহিদরা রেখে গেছে, দেশের প্রতিটা মানুষ যদি তা বুকে ধারণ করে তবে তাই হবে যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে আমাদের সব আছে। আশাকরি আগামীর বাংলাদেশ হবে একটা সুন্দর সমৃদ্ধ উন্নত রাষ্ট্র। আমার আশা কি খুব অলীক, আপনারাই বিবেচনা করবেন।
লেখক: গবেষক
দেশকন্ঠ/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।