• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ০১:২৮    ঢাকা সময়: ১১:২৮

কানাডার নাটক রামগরুড়ের ছানা এবং পৌরাণিকএ বিমোহিত দর্শক

মৃণাল বন্দ্য, কানাডা থেকে : কলকাতার সুদর্শন পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ প্রেমে পড়েন টেকনাফের জমিদার ওয়ান থিনের একমাত্র মেয়ে অপরূপ সুন্দরী মাথিনের। তিনি। খুব ভোরে কূপ থেকে পানি নিতে আসতেন মাথিন। নিজের অজান্তেই ওই সময় মাথিনকে দেখার অপেক্ষায় থাকতেন ধীরাজ। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় সে দৃশ্য যেন স্বর্গের অনুভূতি এনে দিত। মাথিনও এমন নীরব প্রেমের বিষয়টি বুঝতে পারলেন এবং সাড়া দিলেন। দুজনের প্রেমের সূচনা এভাবেই। ধীরাজের এই প্রেম মেনে নিতে কোনো আপত্তি ছিল না মাথিনের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের। এমন পরিস্থিতিতে ধীরাজ বাবার চিঠি পেয়ে মাথিনকে না জানিয়ে ফিরে যান কলকাতায়। অসহায়, বঞ্চিত ও প্রতারিত মাথিন মানতে পারলেন না তা। কূপের পাশেই অপেক্ষায় থাকেন ধীরাজের। জল পর্যন্ত স্পর্শ করেননি তিনি। একসময় ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। টেকনাফের সত্য এই ঘটনার উপর ধীরাজ ভট্টাচার্যের 'আমি যখন পুলিশ ছিলাম' বইটি থেকে নাটক 'পৌরাণিক'। সুব্রত পুরুর রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হলো কানাডার টরেন্টোর মঞ্চে। 

পৌরাণিক নাটকের আঙ্গিককে বলা যায় 'গীত-নৃত্য-মঞ্চশ্রুতিনাট্য'! এখানে একই সাথে ছিল মঞ্চক্রিয়া ও বাচিক অভিনয় অর্থাৎ 'প্লে রিডিং' বা 'স্টেজ রিডিং'এর সমন্বয়! মৌলিক গানের সাথে নৃত্যের সংযোজন ও সাথে বাচিকের সমন্বয়ে মঞ্চে যে মিথষ্ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তার কৃতিত্ব কেবলই নাট্য নির্দেশকের! অভিনয় করেছেন একঝাক নতুন অভিনেতা, সাথে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ কিছু অভিনেতা।

এরপর মঞ্চস্থ হয় নাটক 'রাম গরুড়ের ছানা'। এই নাটকটিরও রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন সুব্রত পুরু। এটি একটি বিদ্রুপাত্মক বা Satire নাটক! নাটকের পুরো শরীর জুড়েই ছিল হাস্যরসের মাধ্যমে ঘটে যাওয়া সমাজের কিছু চেনা ঘটনার বিদ্রুপাত্মক উপস্থাপন! সবশেষে কমেডির চিরায়ত পরিণতির ধারায় না গিয়ে নাট্যকার আনন্দকেই প্রধান্য দিয়েছেন! নির্দেশক মানে সেই একই ব্যক্তি নাটকটি মঞ্চায়নের প্রায়োগিক জায়গায় দাঁড়িয়ে 'থার্ড থিয়েটার ফর্ম'র কথা ভেবেছেন এবং সফল ভাবে তা করেও দেখিয়েছেন! এই মুনশিয়ানার জন্য নির্দেশক অবশ্যই অভিনন্দনসহ ধন্যবাদের দাবী রাখে! 

নাটক দুটিতে অভিনয় করা জনপ্রিয় অভিনেতা মাহমুদুল ইসলাম সেলিম বলেন- “সকলের ভাল অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের! আলো ও আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার, শব্দযন্ত্রের ত্রুটিহীনতা, মঞ্চসজ্জার অনারম্বরতা, সব মিলিয়ে দর্শক আনুকুল্য, মুহুর্মুহ করতালি ও চুড়ান্ত আনন্দ নিয়ে দর্শকদের মঞ্চত্যাগ! এই সবই নাটকের সাথে যুক্ত প্রতিটি নাট্যবন্ধুকে পরিতৃপ্তি দিয়েছে নিঃসন্দেহে!”

গত ২ ও ৩ নভেম্বর টরন্টোতে মঞ্চস্থ হয়েছে নাট্যসঙ্ঘ, কানাডা'র তৃতীয় ও চতুর্থ প্রযোজনা 'রামগরুড়ের ছানা' এবং 'পৌরাণিক'। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে নাট্যসঙ্ঘ, কানাডা তাদের প্রতিটি প্রযোজনাতেই মৌলিক নাটক নিয়ে কাজ করেছে। নাট্যকার ও নির্দেশক সুব্রত পুরু বলেন- 'রামগরুড়ের ছানা' নাটকটি মূলত প্রবাসজীবনের বিভিন্ন টানাপোড়েন, মানসিক দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধহীনতা, প্রচারমুখী জীবন-যাপন প্রভৃতি বিষয়গুলোর উপর একটি স্যাটায়ারভিত্তিক পরিবেশনা। এখানে নেতিবাচক বিষয়গুলোর দৃষ্টিকোণভিত্তিক উপস্থাপনায় দর্শক যখন চরিত্রের সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়ে প্রায় একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে তখনই ইতিবাচক একটি আবহ তৈরীর মাধ্যমে নাটক শেষ হয় এই বার্তা দিয়ে যে, আমরা এই প্রবাসজীবনে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও একটি শুভ ও সুন্দরকে লালন করি। 'পৌরাণিক' মূলতঃ একটি শ্রুতি-মঞ্চ নাটক। এখানে ধীরাজ ভট্টাচার্যের 'আমি যখন পুলিশ ছিলাম' বইটির মাথিন মূখ্য চরিত্র। যে তার প্রিয়ের প্রতীক্ষায় দিন গুণতে গুণতে অবশেষে ঝরে যায়। মাথিনের সাথে গ্রীক প্রেমের উপাখ্যান, রাধা-কৃষ্ণের বিরহপালা, আবহমান বাংলার বিভিন্ন প্রেমের উপাখ্যানের সংযোজন দর্শক-শ্রোতাদের এই বার্তাই দেবে যে, প্রেম চিরন্তন, ভালবাসা যুগে যুগে সর্বজয়ী।‘

প্রবাস জীবনের প্রচন্ড ব্যস্ততা স্বত্বেও প্রায় ৫ মাস নিয়মিত মহড়া শেষে মঞ্চস্থ হয় নাটক দুটি। নাটকে প্রতিটি গান লিখেছেন নাট্যকার নিজেই। মিউজিকে কাজ করেছেন অমিতাভ দাস ও মামুন কায়সার। সেলিম চৌধুরী ও মিহির দাশ আলোক পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণের দায়িত্বে ছিলেন। শব্দ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন শমী সাত্তার। সুভাষ দাশ, স্নিগ্ধা চৌধুরী, নবনী ও গোলাম রব্বানী শিহাব নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন। 

নাটক দুটিতে অভিনয় করেছেন— মাহমুদুল ইসলাম সেলিম, অনুপ সেন গুপ্ত, সুভাষ দাশ, ইশরাত দীপ্তি, ম্যাক আজাদ, এলিনা মিতা, আশরাফ রানা,আশরাফি নাহিদ, মৃণাল বন্দ্য, জুসী ডায়না বিশ্বাস, অনিন্দিতা বিশ্বাস, অমিত গোমেজ, তাপস দেব, নবনী তাহসীন, সুকন্যা দাশ, সুচেতা পুরু। নাটক দুটির মাঝে গান পরিবেশন করেছেন প্রথমদিনে অতিথি শিল্পী সোনালী রায় ও পরের দিন শিল্পী রণি প্রেন্টিস রায়। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আবিদ কনক। উৎসবের প্রাইম স্পন্সর হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত।
দেশকণ্ঠ/আসো

 

 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।