দেশকন্ঠ অনলাইন : বিহারের পাটনা থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের ছোট শহর সামস্তিপুর। শহর না বলে গ্রাম বলাই ভালো। এখানেই বসবাস সঞ্জীব সূর্যবংশীর। স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবেন। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি। পারিবারিক কৃষি জমি থাকায় পেশা হিসেবে সেটাকেই বেছে নেন। কিন্তু ক্রিকেটের স্বপ্নটা ঠিকই পুষে রেখেছিলেন, যেটা তিনি ছড়িয়ে দেন ছেলে বৈভব সূর্যবংশীর মাঝে।
এই বৈভব সূর্যবংশীর নাম এখন সবার মুখে মুখে। আইপিএলের ২০২৫ সালের আসরের নিলামে ১৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের দল পাওয়া অবাক করেছে সবাইকে। তাও যেনতেন দামে নয়, তাকে কিনতে কোটি টাকা (১ কোটি ১০ লাখ রূপি) খরচ করতে হয়েছে রাজস্থান রয়্যালসকে। কৃষক বাবার সন্তান থেকে আইপিএলে কোটিপতি হবার গল্পটা অবশ্য সহজ নয়।
মাত্র ৪ বছর বয়সে বাড়ির উঠোনে বাবা সঞ্জীবের হাতেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় বৈভবের। বাড়ির পিছনে ছোট একটু জায়গা পরিষ্কার করে ছেলে ক্রিকেট শেখাতে শুরু করেছিলেন সঞ্জীব। এরপর ৯ বছর বয়সে সামস্তিপুর ক্রিকেট একাডেমিতে শুরু হয় বৈভবের ক্রিকেট অধ্যায়।
সাড়ে এগারো বছর বয়সে বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে ট্রায়ালে দিয়ে শুরু। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অসীম প্রতিভাধর এই কিশোরকে। ট্রায়ালে ভালো পারফর্ম করলেও বয়স কম দেখে তাকে স্ট্যান্ড বাই রেখেছিলেন বিহারের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের নির্বাচকেরা। সেখানেই চোখে পড়ে যান সাবেক রঞ্জি ক্রিকেটার মণীশ ওঝার। তিনিই বৈভবকে আরও শাণিত করেছেন।
প্রথম শ্রেণির কিকেটে বৈভবের অভিষেক হয় মাত্র ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে। এরপর কেবল সামনে আগানোর পালা। এই কিশোর আলোচনায় উঠে আসেন চলতি বছর ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে। এই পর্যায়ে সাদা পোশাকে এটাই ভারতের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি। ১৬৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ১৪ চার এবং ৪ ছক্কায় ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি।
এতো অল্প বয়সে বৈভবের আইপিএলের মঞ্চে ডাক পাওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। তবে পেছনের গল্পে ফিরলে বেসম্ভব এক প্রতিভাধর কিশোরের দেখা মিলবে। যে কিশোর নানা পর্যায়ের ক্রিকেটে ৪০টি সেঞ্চুরি ও দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। বিহারের অনূর্ধ্ব-১৯ আসর রনধির ভার্মা টুর্নামেন্টে আছে ট্রিপল সেঞ্চুরিও। এর ফল বৈভব পেয়েছেন ৩০ লাখ রূপি ভিত্তিমূল্য থেকে থেকে ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছে।
ক্রিকেটে বয়স লুকানো একটি নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। বৈভবের নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার সত্যিকারের জন্মদিন ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। সেই অনুযায়ী তার বয়স এখন ১৫। তবুও প্রতিভার কাছে বয়স তো স্রেফ একটি সংখ্যা। যে সংখ্যায় ভর করে বিহারের এই কিশোর মাতাবেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
ছেলে আইপিএল নিলামে দল পেয়েছে, ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো বাবা সঞ্জীবের কাছে। বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন ছেলেকে এই পর্যায়ে আনতে পেছনের গল্প। কয়েক শব্দে কেবল বলেছেন, “বৈভব এখন শুধু আমার সন্তান নয়, পুরো বিহারের সন্তান। আমার ছেলে কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমিও অনেক অর্থ ব্যয় করেছি। ওর খরচ জোটাতে নিজের শেষ সম্বল জমিও বিক্রি করেছি। এখনও আমাদের অর্থকষ্ট আছে।”
বাবার স্বপ্নটা আগেই পূরণ করেছেন, এবার বাবার অর্থকষ্ট লাঘব করতে যাচ্ছেন বৈভব। তার সামনে অপার সম্ভাবনাময় সুযোগ। ব্যাটের সুরে আইপিএলের মঞ্চ আচ্ছন্ন করে ভারতীয় ক্রিকেটে আলোক ছটা ছড়ানোর এই তো সময় সূর্যবংশীদের ‘সূর্য’র সামনে। পারবেন কিনা সেটা সময়ি বলে দেবে।
দেশকন্ঠ/এআর