দেশকন্ঠ অনলাইন : জেলায় এ বছর প্রায় ৪০ হাজার প্রান্তিক কৃষককে সরকারিভাবে ৮০ হাজার কেজি বোরো ধানের বীজ প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
বর্তমানে জেলার হাওর এলাকায় পুরোদমে বোরো ধানের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। আবহাওয়া বীজ বপনের অনুকূলে থাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকদের। তবে আগাম বন্যা, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, কৃষি যন্ত্রপাতি, সার কীটনাশক ও ডিজেলের দাম বাড়ায় শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এ কারনে দিনদিনই ধান চাষে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলার ৫টি আংশিক ও তিনটি সম্পূর্ণ হাওর অধ্যুষিত। এর মধ্যে তিন হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বোরো ধানের আবাদ হয়ে থাকে। এবার জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। এবার জেলার হোসেনপুর উপজেলায় ২৮০০জন কৃষককে ৫৬০০ কেজি বীজ, সদর উপজেলায় ৩১০০জন কৃষককে ৬২০০ কেজি বীজ, পাকুন্দিয়া উপজেলার ৩১০০জন কৃষককে ৬২০০ কেজি বীজ, কটিয়াদী উপজেলায় ৩১০০জন কৃষককে ৬২০০ কেজি বীজ, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৩১০০জন কৃষককে ৬২০০ কেজি বীজ, তাড়াইল উপজেলায় ৩০০০জন কৃষককে ৬০০০ কেজি বীজ, ইটনা উপজেলায় ৩৩০০জন কৃষককে ৬৬০০ কেজি বীজ, মিঠামইন উপজেলায় ৩৩০০ জন কৃষককে ৬৬০০ কেজি বীজ, অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৩৩০০জন কৃষককে ৬৬০০ কেজি, নিকলী উপজেলায় ৩১০০জন কৃষককে ৬২০০ কেজি বীজ, বাজিতপুর উপজেলায় ৩২০০জন কৃষককে ৬৪০০ কেজি বীজ, কুলিয়ারচর উপজেলায় ২৮০০জন কৃষককে ৫৬০০ কেজি ও ভৈরবে উপজেলায় ২৮০০জন কৃষককে ৫৬০০ কেজি বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
এতে জেলার প্রায় ৪০ হাজার কৃষককে ৮০ হাজার কেজি বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে কৃষকেরা একমাত্র ফসল বোরোর আবাদের ওপর নির্ভরশীল। তাই হাওরে বোরো ধানের মৌসুমকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। এবার জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমি বীজতলা তৈরি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১১.৫ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের, ২ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ও ১৯.৩৩ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চারা উৎপাদন করা হবে।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে ডিজেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে জমি চাষ, সেচ ও শ্রমিকের মূল্য। বাধ্য হয়ে খরচ পুষিয়ে নিতে নির্দিষ্ট সময়ে ধান রোপণের লক্ষ্যে শীত উপেক্ষা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এরই মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। কামরুজ্জামানের মতো হাজার হাজার কৃষক বছরের একমাত্র ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে দিন রাত এক করে কাজ করেন হাওরে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এ বছর কৃষকদের সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া জেলার প্রায় ৪০ চাষীকে বোরো আবাদে জন্য ২কেজি করে ৮০ হাজার কেজি বীজ সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে হাইব্রিড ধানের ৩২০ হেক্টর, উপসী ধানের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৩৩ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এবার জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান ৩৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর, উফশী জাতের ধান ৬৭ হাজার ৩৮০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ধান ২৬০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হবে।
দেশকন্ঠ/এআর