দেশকন্ঠ অনলাইন : জেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। বাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে একটু বেশি লাভের আশায় সবজিতে স্বপ্ন বুনছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলাসহ তিস্তা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমিগুলোতে দিন দিন বেড়েই চলেছে সবজি চাষ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ,টমেটো, বেগুন,শিম, মুলা, করলা, পটল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির আবাদ। মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত কৃষকরা। কিছুদিনের মধ্যেই এসব সবজি বাজারজাত শুরু করবেন এমনই প্রত্যাশা করছেন এখানকার কৃষকরা।
বর্তমান সময়ে এখানকার কৃষকরা কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে জমিতে হালচাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের এ মৌসুমে জেলার বিভিন্ন বাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলোতে সবজি পাঠাবেন কৃষকরা । এ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে লালমনিরহাটের কৃষকেরা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কোনো আগাম সবজি চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। আর মুনাফাও অনেক বেশি হয়। তাই কৃষকরা বিশেষ করে উঁচু জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও বাঁধাকপির জুড়ি নেই। পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে কপি চাষের জন্য উপযুক্ত।
তিস্তা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে আগাম সবজি চাষে বেশ আলোড়ন তুলছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক মতিয়ার রহমান(৫০) বলেন, বর্তমানে সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় গুণগত মানে চাহিদাও অনেক বেশি । গত বছর আমি এক একর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। চলমান বাজার ও আবহাওয়া ভালো থাকলে একই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা রাখছি।
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আশরাফুল হক(৪০) জনান, গত বছর তিনি ১ একর জমিতে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন শাক সবজি পেয়েছেন। তা পাইকারি বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক জাহিদ হাসান (৪২) বলেন, সবজি চাষে তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও তেমন বেশি না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। তবে সেবায় ত্রুটি করা যাবে না।
এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালোই আর পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব। সব মিলিয়ে সবজি চাষকেই আমরা লাভজনক মনে করছি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়, এবার শীতকালীন শাক-সবজিসহ প্রায় সব রকমের ফসলের ভালোই ফলন হচ্ছে। আশা করি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি শাকসবজি উৎপাদন হবে এ অঞ্চলে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ আবাদ হয়েছে এবং ২ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। সেইসাথে আগাম শাকসবজি ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে সবজির চাহিদা থাকায় কৃষকরা নায্য দামে বিক্রি করতে পেরে লাভবান হচ্ছে।
দেশকন্ঠ/এআর