দেশকণ্ঠ অনলাইন : ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে স্থানীয় ছোটখাটো বিরোধ মীংমাসা এবং গ্রামীণ জনগণের মাঝে বিচারিক সেবা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগীয় প্রকল্প এলাকার ৮৮৬টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতগুলোকে আরো সক্রিয় করতে বিভাগীয় পর্যায়ে দিক-নির্দেশনা লাভ করা।
ঢাকা বিভাগের অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) কে এম আলী আযমের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সম্মেলনে প্রায় ৩৭০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। বিভাগীয় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, গ্রাম আদালত বিচারিক সেবার একটি কার্যকর মাধ্যম, যা তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং স্থানীয় সরকার, ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে এ প্রকল্পে সহযোগিতায় জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) উপ-আবাসিক প্রতিনিধি মিস্ সোনালী দায়ারাত্ন গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে তৃণমূলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীরা স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারছেন। পাশাপাশি গ্রাম আদালত উন্মুক্ত বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে।
বিশেষ অতিথি এ কে এম তারিকুল আলম, অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক, এভিসিবি ৩য় পর্যায় প্রকল্প বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিশেষত- জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নেতৃত্ব এবং নির্দেশনায় ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার (ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ) ৮৯টি উপজেলায় প্রকল্পটির স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মাঝে গ্রাম আদালত সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর সেবা গ্রহণে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করতে প্রকল্প এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের নেতৃত্ব ও ভূমিকা প্রশংসনীয়।
উল্লেখ্য, ‘গ্রাম আদালত’ একটি সরকারী সেবা। ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পটি চালু করে। প্রকল্পটি শুরুর পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ন্যায়বিচার সহজলভ্য করে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করেছে।'
সম্মেলনে ২ জন উপকারভোগী (১ জন নারী, ১ জন পুরুষ) গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গ্রাম আদালত ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এছাড়া ২ জন যুব প্রতিনিধি গ্রাম আদালত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্থানীয়ভাবে বিরোধ নিষ্পত্তিতে গ্রাম আদালতের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সম্মেলনে উপস্থিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তানভীর আহমেদ, জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা এবং মো: হাতেম আলী পিপিএম, অতিরিক্ত ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দিয়েছেন জনাব মো: আব্দুর রহিম, পরিচালক, স্থানীয় সরকার, ঢাকা বিভাগ। বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ— ৩য় পর্যায় প্রকল্প সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী বিভাষ চক্রবর্তী। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা রির্সোস টিমের সদস্য, জেলা তথ্য ও লিগ্যাল এইড অফিসার, বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কর্মকর্তা, গ্রাম আদালত প্রকল্পের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিনিধি। গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ— ৩য় পর্যায় প্রকল্পের ঢাকা বিভাগের কার্যক্রম ও এর অগ্রগতি নিয়ে উপস্থাপনা করেন মেীসুমী সরকার রাখী, উপপিরচালক, স্থানীয় সরকার, নরিসংদী।
বক্তারা প্রকল্প এলাকাসহ দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রাম আদালতগুলোকে আরো সক্রিয় করতে জেলা উপজেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা নিয়মিতকরণ ও এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন। একইসঙ্গে তারা গ্রাম আদালতে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে চেয়ারম্যানদের অনুকরণীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার উপরও জোর দেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চেয়ারম্যানগণ গ্রাম আদালতের কার্যকরীকরণে গ্রাম আদালতের আর্থিক বিচারিক এখতিয়ার বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্প স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং অন্যায়ের প্রতিকার লাভের লক্ষ্যে তৃণমূলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষত: নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্য কাজ করছে। প্রকল্পটি বর্তমানে এর ৩য় পর্যায়ে দেশের ৮টি বিভাগের ৬১ জেলার (পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলা ব্যতিত) ৪৬৮ উপজেলার ৪,৪৫৩ টি ইউনিয়নে গ্রামীণ জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছে। এছাড়াও প্রকল্পটি এর ১ম ও ২য় পর্যায়ে দেশের ১,৪১২টি ইউনিয়নের ২৫ লাখেরও বেশি স্থানীয় লোকজনকে (১৯,৫৩,০০০ নারী) বিচারিক সুবিধা পেতে সাহায্য করেছে।
দেশকণ্ঠ/আসো