• বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ২১:১১    ঢাকা সময়: ০৭:১১

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির আগমনে চাকরি হারাবেন যারা

দেশকন্ঠ ডেস্ক : আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে চাকরির বাজারে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে যাবে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) এক সমীক্ষায় বলেছে, এ সময়ে বিশ্বের ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চাকরি হারাবেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের পরিবর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব কাজ চালাবে বলে এ আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করে এআই প্রযুক্তি চালুর দিকেই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশন বা আইবিএম সেই পথেই হাঁটছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। আগামী কয়েক বছরে ৭ হাজার ৮০০ কর্মী ছাঁটাই করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন আইবিএমের প্রধান নির্বাহী (সিইও) অরবিন্দ কৃষ্ণা।

আবার এর ইতিবাচক দিকও আছে। এআই আসার কারণে অনেক নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্রে তৈরি হবে। আবার কিছু নিরাপদ চাকরি আছে, যেখানে এআই তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাকস গত মার্চ মাসের প্রতিবেদনে বলেছে, কনটেন্ট তৈরি করতে সক্ষম এআই বর্তমানে মানুষের দ্বারা করা সব কাজের এক-চতুর্থাংশ করতে পারে। অটোমেশনের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারেন।

‘রুল অব দ্য রোবোটস: হাউ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স উইল ট্রান্সফরম এভরিথিং’ বইয়ের লেখক ও মার্কিন ফিউচারিস্ট মার্টিন ফোর্ড বলেছেন, এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘এটি শুধু যে ব্যক্তি পর্যায়ে ঘটবে, তা নয়, তবে এটি বেশ পদ্ধতিগতভাবে হতে পারে। এটি হঠাৎ একই সময়ে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে ঘটতে পারে। আর এর প্রভাব শুধু সেই ব্যক্তি নয়, পুরো অর্থনীতিতেই পড়বে।’

তবে এত খারাপ খবরের মধ্যে ভালো খবরও আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কিছু বিষয়ে আছে, যা এআই করতে সক্ষম নয়। স্বতন্ত্রভাবে মানবিক গুণাবলি জড়িত, যেমন আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ও প্রথার বাইরে গিয়ে ভিন্ন ভাবনা ভাবার মতো কাজগুলো এআইয়ের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই আপাতত এসব কাজের কর্মীদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা নেই।

এ বিষয়ে মার্টিন ফোর্ড বলেছেন, ‘আমার ধারণা, সাধারণত তিন ক্যাটাগরির কাজের ভবিষ্যৎ এখনো আছে। এর প্রথমটি হলো এমন চাকরি, যা প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীল কাজ, যা ফর্মুলা অনুযায়ী কাজ নয় বা কেবল কিছু বিষয়কে পুনর্বিন্যাস করা নয়; বরং সত্যিকারের নতুন ধারণা নিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার কাজ।’

ফোর্ড বলেন, তবে এর অর্থ এই নয় যে ‘সৃজনশীল’ হিসেবে বিবেচিত সব কাজই নিরাপদ। যেমন গ্রাফিক ডিজাইন ও ভিজ্যুয়াল আর্ট-সম্পর্কিত কাজগুলো প্রথমে এআইয়ের কাছে চলে যেতে পারে। মৌলিক অ্যালগরিদম লাখো ছবি বিশ্লেষণ করার জন্য একটি বটকে নির্দেশ করতে পারে, যা এআইকে তাত্ক্ষণিকভাবে ওই ছবি নান্দনিক করতে দেয়। তবে অন্য সৃজনশীল কাজে কিছু নিরাপত্তা আছে, যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও আইন। এসব কাজে একটি নতুন আইনি কৌশল বা ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে আসা যায়। এসব কাজে মানুষের জন্য একটি পোক্ত জায়গা হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন ফোর্ড।

ঝুঁকিপূর্ণ নয়, নিরাপদ ও ভবিষ্যৎ আছে, এমন দ্বিতীয় ক্যাটাগরির কাজ হিসেবে পরিশীলিত আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক নিয়ে কাজের কথা বলেছেন ফোর্ড। এসব কাজের মধ্যে আছে-নার্স, ব্যবসায়িক পরামর্শক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। তিনি বলেছেন, ‘এসব কাজে মানুষকে খুব গভীরভাবে বোঝার প্রয়োজন হয়। এসব চাকরি দখলে নিতে গেলে আমার মনে হয়, সত্যি সত্যি সম্পর্ক তৈরি করতে পারে এমন যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকতে হবে এআইয়ের।’

অনুমান করা যায় না এমন পরিবেশে ব্যাপক গতিশীলতা, দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতার প্রয়োজন আছে-এমন কাজকে তৃতীয় নিরাপদ ক্যাটাগরির কাজ বলেছেন ফোর্ড। কারিগরি কাজগুলো, যেমন ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ, প্লাম্বারের কাজ ও ওয়েল্ডারের কাজগুলো এর আওতায় পড়ে।

ফোর্ড বলেন, ‘এ ধরনের চাকরিতে সব সময় একটি নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। এ ধরনের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করানোর জন্য একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনিভিত্তিক রোবট প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হতে পারে স্টার ওয়ার্স এর সি-৩পিও।’
এসব চাকরিতে কর্মী হিসেবে মানুষই কাজ করে যাবে। তবে এর অর্থ এই নয় যে এসব কাজ একেবারেই এআই করতে পারবে না। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব বাফালোর লেবার ইকোনমিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোয়ান সং ম্যাকলাফলিন বলেছেন, শিল্প নির্বিশেষে বেশির ভাগ চাকরিরই এমন দিক আছে, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যেতে পারে।

জোয়ান সং ম্যাকলাফলিন বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, চাকরির জন্য তাত্ক্ষণিক কোনো হুমকি নেই। তবে কাজগুলো পরিবর্তন হয়ে যাবে। মানুষের কাজ আরও বেশি আন্তব্যক্তিক দক্ষতাকেন্দ্রিক হয়ে যাবে। এটা কল্পনা করা সহজ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এআই মানুষের চেয়ে ভালোভাবে ক্যানসার শনাক্ত করবে। আমার ধারণা, ভবিষ্যতে চিকিত্সকেরা এমন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন। তবে চিকিত্সকদের পুরো ভূমিকা এআই নিয়ে নেবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।’ তিনি আরও বলেন, যদিও রোবটের নির্ভুলভাবে ক্যানসার শনাক্ত করার সম্ভাবনা থাকবে, তারপরও অধিকাংশ মানুষ রোগ সম্পর্কে একজন ব্যক্তি চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলতে চাইবেন। এটা প্রায় সব কাজের ক্ষেত্রেই সত্য। এ কারণে স্বতন্ত্রভাবে মানবিক দক্ষতা বিকাশ করে মানুষকে এআইয়ের পাশাপাশি কাজ করে যেতে হবে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ফিউচার অব জব রিপোর্ট ২০২৩ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ, ডেটা-বিশ্লেষক, বিজ্ঞানী, ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্পেশালিস্ট ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ অনেক বেড়ে যাবে। ডব্লিউইএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে; ডেটা-বিশ্লেষক, বিজ্ঞানী বা বিগ ডেটা অ্যানালিস্টের সংখ্যা বাড়বে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং ইরফরমেশন সিকিউরিটি অ্যানালিস্টের সংখ্যা ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ সময়ের মধ্যে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অর্থাত্ এসব চাকরি নিরাপদ স্তরে আছে। তবে রেকর্ড-কিপিং ও প্রশাসনিক পদের চাকরি হুমকির মুখে আছে।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে শ্রমবাজার অনেক কিছুই প্রভাবিত করবে। নতুন চাকরি সৃষ্টির ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবস্থা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে থাকবে এবং এর সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিও উচ্চতর হতে শুরু করবে। এতে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়োগ করতে হবে। এতে একদিকে যেমন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, তেমনই নেতিবাচক ভূমিকাও রাখবে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পরিচালিত করার জন্য নতুন ধরনের দক্ষ কর্মীও লাগবে।

এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের কী কী দক্ষতা প্রয়োজন, তা পুনর্বিবেচনা করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ‘দক্ষভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সরঞ্জাম ব্যবহারের ক্ষমতা’কে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

আগামী পাঁচ বছরে দ্রুত বেড়ে যাওয়া ১০ চাকরির মধ্যে আছে-

১. এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ ২. সাসটেইনেবিলিটি স্পেশালিস্ট ৩. বিজনেস ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিস্ট ৪. ইনফরমেশন সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট ৫. ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার ৬. ডেটা অ্যানালিস্ট ও বিজ্ঞানী ৭. রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার ৮. ইলেকট্রোটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ার ৯. অ্যাগ্রিকালচারাল ইকুইপমেন্ট অপারেটর ১০. ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্পেশালিস্ট

আগামী পাঁচ বছরে দ্রুত হারিয়ে যাওয়া ১০ চাকরির মধ্যে আছে—

১. ব্যাংক টেলারস অ্যান্ড রিলেটেড ক্লার্কস ২. পোস্টাল সার্ভিস ক্লার্কস ৩. ক্যাশিয়ারস অ্যান্ড টিকিট ক্লার্কস ৪. ডেটা এন্ট্রি ক্লার্কস ৫. অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারিস ৬. ম্যাটেরিয়াল-রেকর্ডিং অ্যান্ড স্টক-কিপিং ক্লার্কস ৭. অ্যাকাউন্টিং, বুককিপিং অ্যান্ড পে-রোল ক্লার্কস ৮. লেজিসলেটরস অ্যান্ড অফিশিয়ালস  ৯. স্ট্যাটিসটিক্যাল, ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ক্লার্কস ১০. ডোর-টু-ডোর সেলস ওয়ার্কারস, নিউজ অ্যান্ড স্ট্রিট ভেন্ডরস।
দেশকন্ঠ/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।