দেশকন্ঠ অনলাইন : জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব শক্তির সন্ধানে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। হাইড্রোজেন গ্যাসকে ভবিষ্যতের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন মতামত থাকলেও, সরবরাহ সংকট ও মজুদের ঘাটতি ছিল বড় বাধা। এত দিন মনে করা হতো, হাইড্রোজেনের ছোট আণবিক গঠনের কারণে এটি ভূগর্ভে দীর্ঘসময় ধরে জমা হতে পারে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে বিপুল সম্ভাবনার খবর।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ভূগর্ভের শিলা ও জলাধারগুলোতে প্রায় ৬ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন টন হাইড্রোজেন জমা রয়েছে। এই বিপুল মজুদ থেকে প্রায় ২০০ বছর ধরে জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব। এমনটা হলে, ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা প্রায় পুরোপুরি শেষ হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন, আলবেনিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলোতে হাইড্রোজেনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্রোমিয়াম খনিগুলোর নিচে থাকা শিলাগুলো থেকেও হাইড্রোজেন উৎপন্ন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের বিজ্ঞানী জিওফ্রে এলিস বলেছেন, আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও অনেক বেশি হাইড্রোজেন ভূগর্ভে জমা রয়েছে। এটি জ্বালানির চাহিদা মেটানোর বড় সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বিশ্বের শক্তি চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ আসবে হাইড্রোজেন থেকে। ২০৫০ সালের মধ্যে হাইড্রোজেনের চাহিদা পাঁচ গুণেরও বেশি বাড়তে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ভূগর্ভে থাকা এই হাইড্রোজেনের মজুদ বিশ্বের মোট তেলের মজুদের ২৬ গুণ বেশি। তবে ভূগর্ভের ঠিক কোন কোন স্থানে এই মজুদ রয়েছে, তা এখনো পুরোপুরি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের পর বর্জ্য হিসেবে কেবল পানি নির্গত হয়। ফলে এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় এটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভূগর্ভে জমে থাকা এই বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন শুধু জ্বালানি সংকটই দূর করবে না, বরং জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবেশ বিধ্বংসী প্রভাব থেকেও মানবজাতিকে রক্ষা করবে।
দেশকন্ঠ/এআর