• মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১  নিউইয়র্ক সময়: ১১:৫০    ঢাকা সময়: ২১:৫০

রেকর্ড বিনিয়োগে চ্যাটজিপিটি নির্মাতার বাজারমূল্য এখন ১৫৭০০ কোটি ডলার

দেশকন্ঠ অনলাইন : রেকর্ড ৬৬০ কোটি ডলার (৬.৬ বিলিয়ন ডলার) নতুন বিনিয়োগ পেয়েছে চ্যাটজিপিটি নির্মাতা ওপেনএআই। নতুন এই তহবিল সংগ্রহের পর প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে (১৫৭ বিলিয়ন ডলার)। ফলে ওপেনএআই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি।

গতকাল (২ অক্টোবর) ওপেনএআই নিজেদের সাইটে পোস্ট করে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন এই বিনিয়োগ উত্তোলনের বিষয়টি ঘোষণা করে। এআই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ত্বরান্বিত করা, কম্পিউটিং সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পারদর্শী এআই টুল তৈরিতে নতুন এই বিনিয়োগের এই অর্থ খরচ করা হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।  

গত প্রায় এক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছিলো নতুন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি) রাউন্ডের মাধ্যমে ওপেনএআই ৬.৫ বিলিয়ন ডলার তহবিল উত্তোলন করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন এই বিনিয়োগ উত্তোলনের মাধ্যমে জনপ্রিয় এই স্টার্টআপের বাজারমূল্য যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সীমানা অতিক্রম করবে সেটাও বেশ ভালোভাবেই অনুমান করা যাচ্ছিল। পরবর্তীতে প্রাক-উত্তোলন রাউন্ডেই বাজারমূল্য ১৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছয়।

ওপেনএআই’তে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী প্রার্থীর তালিকা লম্বা হলেও মূল বাঁধা হয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটির অ-লাভজনক (নন-প্রফিট) কর্পোরেট কাঠামো। বিশেষ করে প্রফিট ক্যাপ বা মুনাফা সীমাবদ্ধ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের অনেকেই নিরুৎসাহিত হন। তবে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই আভ্যন্তরীণ কাঠামোগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লাভজনক (ফর প্রফিট) ব্যবসায়ের উপর অ-লাভজনক (নন-প্রফিট) বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ যেন না থাকে সেটিও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ফলে কার্যত নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে ওপেনএআই’র সামনে আর কোনও বাঁধা নেই। তবে ২০১৫ সালে অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা ওপেনএআই এও জানিয়েছে যে, এআই গবেষণার মতো ব্যয়বহুল প্রজেক্টের অর্থসংস্থানে নিজেদের লাভজনক ব্যবসার উপর নির্ভরশীল হলেও প্রতিষ্ঠানের গোড়ায় যে অ-লাভজনক কাঠামো সেটির পরিবর্তন হচ্ছে না।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১.২ বিলিয়ন ডলার (১২০ কোটি ডলার) বিনিয়োগ করেছে ওপেনএআই-এর পুরোনো বিনিয়োগকারী থ্রাইভ ক্যাপিটাল।পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ অংশীদার মাইক্রোসফটও অংশ নিয়েছে এবারের এই অর্থ উত্তোলনের (ফান্ডিং) রাউন্ডে। তাঁদের বিনিয়োগের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা কম।

এছাড়া এআই চিপ তৈরিতে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ওপেনএআই’র অংশীদারদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন আলোচনার পরেও বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকে আরেক টেক জায়ান্ট অ্যাপল।

আরেক পুরোনো বিনিয়োগকারী খোসলা ক্যাপিটালও ওপেনএআই’তে নিজেদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবারের ভিসি রাউন্ডে নতুন করে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে। এছাড়া এআই বিশ্বের সুপরিচিত বিনিয়োগকারী ক্যাথি উডের এআরকে ভেঞ্চার ফান্ডও ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এআই প্রতিষ্ঠানটিতে।

এবারের তহবিল উত্তোলন রাউন্ডের আরেক আলোচিত বিনিয়োগকারী হচ্ছে জাপান-ভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংক- যাদের বিনিয়োগ ৫০০ মিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, এআই খাতে বিনিয়োগে সফটব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে  উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এআই চিপ ডিজাইনের সুপরিচিত ইউকে-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এআরএম সফটব্যাংকেরই একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আবুধাবির রাষ্ট্র-সমর্থিত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এমজিএক্সও অংশ নেয় এবারের অর্থ উত্তোলনের রাউন্ডে।

ওপেনএআই-এর প্রধান অর্থবিষয়ক কর্মকর্তা (সিএফও) সারাহ ফ্রিয়ার বুধবার কর্মীদের জানিয়েছেন যে, সাম্প্রতিক এই বিনিয়োগ উত্তোলনের পর ওপেনএআই এবার টেন্ডার অফারের মাধ্যমে তাদেরকে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করার সুযোগ দেবে। তবে এই টেন্ডার প্রদানের সময়সূচি এবং এসম্পর্কিত বিস্তারিত কোনো কিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলেই সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ওপেনএআই ২০২২ সালের নভেম্বরে বাজারে নিয়ে আসে জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’। বর্তমানে সপ্তাহে ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি (২৫ কোটি) ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে থাকে।

নতুন ৬.৬ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি) বিনিয়োগের পাওয়ার পর ওপেনএআই-এর বাজারমূল্য পূর্বের ফান্ডিং রাউন্ডের (৮৬ বিলিয়ন ডলারের) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ১৫৭ বিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য (১৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি) নিয়ে ওপেনএআই’র অবস্থান এখন উবার ও এটিএনটি’র মতো প্রতিষ্ঠানের পাশে।

ওপেনএআই’র আভ্যন্তরীণ কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মিরা মুরাতিসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে গেছেন। চ্যাটজিপিটি’র জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া হলেও আয় বৃদ্ধিতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এআই প্রতিষ্ঠানটিকে।

চলতি বছরে সম্ভাব্য লাভের অঙ্কটা ৩.৬ বিলিয়ন বা ৩৬০ কোটি ডলার হলেও ওপেনএআই-এর ক্ষতির পরিমাণ ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। তবে সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্যাম অল্টম্যান বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিচ্ছেন আগামী বছর তাঁর প্রতিষ্ঠান ১১.৬ বিলিয়ন বা ১১৬০ কোটি ডলার আয় করতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ওপেনএআই আগামী বছর নির্দিষ্ট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হলে বর্তমান বাজারমূল্যে থ্রাইভ ক্যাপিটাল আরও ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ করবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

তথ্যসূত্র: ওপেনএআই, রয়টার্স, গার্ডিয়ান, টেকক্রাঞ্চ, বিজনেস ইনসাইডার, মানিচেক
দেশকন্ঠ//

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

আমাদের কথা

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়া। গতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষও তথ্যানুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অনলাইন। যতই দিন যাচ্ছে, অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক তত নিবিড় হচ্ছে। দেশ, রাষ্ট্র, সীমান্ত, স্থল-জল, আকাশপথ ছাড়িয়ে যেকোনো স্থান থেকে ‘অনলাইন মিডিয়া’ এখন আর আলাদা কিছু নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই ঘটুক, তা আর অজানা থাকছে না। বলা যায় অনলাইন নেটওয়ার্ক এক অবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ভুবন গড়ে তুলে এগিয়ে নিচ্ছে মানব সভ্যতার জয়যাত্রাকে। আমরা সেই পথের সারথি হতে চাই। ‘দেশকণ্ঠ’ সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারিত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরির। আমাদের সংবাদের প্রধান ফোকাস পয়েন্ট সারাবিশ্বের বাঙালির যাপিত জীবনের চালচিত্র। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংবাদও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একঝাক ঋদ্ধ মিডিয়া প্রতিনিধি যুক্ত থাকছি দেশকণ্ঠের সঙ্গে।