দেশকন্ঠ অনলাইন : শীতকালীন আগাম সবজি চাষে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এ বছর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার পরেও থেমে নেই কৃষকদের আগাম সবজি চাষ। উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোর ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ সবজি লাগাতে জমি প্রস্তুত করছেন। কেউ জাতভেদে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউ বা সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। এক কথায় বাড়তি লাভের আশায় শীতকালীন রকমারি সবজি চাষে মাঠে মাঠে চলছে এক ধরনের কর্মযজ্ঞ।
আগাম সবজি চাষে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। মুলা, শিম, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, করলা, লাউ, কাঁচামরিচ, ঢেঁড়স, গাজর, টমেটোসহ নানা জাতের সবজি চাষ করছেন মতলব উত্তরের কৃষকরা। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবে এ এলাকার কৃষকরা। বিশেষ করে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন এসবের জুড়ি নেই এখন মতলব উত্তরের উঁচু জমির।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। তাই মুনাফাও অনেক বেশি হয়। উঁচু জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুলকপি ও বাঁধাকপির জুড়ি নেই। পানি জমে না এমন উঁচু জমি কপি চাষের জন্য উপযুক্ত।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষে বেশ আলোড়ন তুলছেন উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার আদুরভিটি গ্রামের কৃষক নুরুন নবী ও সাইফুল ইসলাম বেপারী।
উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার পাঁচগাছিয়া এলাকায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক মো. সোলাইমান (৪৫) বলেন, এখানকার সবজির কদর ছেংগারচরসহ উপজেলার সর্বত্রই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে এখন কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। এ এলাকায় সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় উৎপাদিত সবজি গুণগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানান কৃষকরা।
তাতুয়া গ্রামে শীতকালীন সবজির বাজার ধরতে ফুলকপি, টমেটো ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন কৃষক গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, কার্তিক মাসের শেষ দিকে আমাদের সবজি বাজারে উঠবে। এজন্য নার্সারি থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে ২৫ দিন থেকে ১ মাস আগে রোপণ করেছেন। ১ শত ৫০ শতক জমিতে প্রায় ১৫-১৮ হাজার কপির চারা রোপণ করা হবে। প্রতিটি চারার পেছনে তাদের খরচ হবে পাঁচ থেকে সাত টাকা। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হবে ২৫ থেকে ৩০ টাকা মূল্যে। কপি ক্ষেত থেকে মাত্র তিন মাসে সাড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন গোলাম সারোয়ার।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ উপজেলায় ১হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছিল। চলতি বছর ১হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে রবি ১৯/২০ জাতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত এ রোপণ ও বপন চলবে।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, কৃষকরা যে ফসলে মুনাফা পায়, সেটাতেই ঝুঁকে পড়েন। শুধু এ উপজেলায় নয়, সারাদেশে আগাম সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, বৃষ্টির পর থেকে কৃষকরা আগাম শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু করেছেন। যা এরইমধ্যে বাজারে উঠেছে এবং কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। আগাম শীতকালীন সবজি চাষে একটু ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য কৃষকদের সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার, জৈব সার এবং কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের জন্য মাঠ পর্যায়ে তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কৃষকরা যেন সবজি চাষে কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
দেশকন্ঠ//